
রাজ্য রাজনীতিতে ফের নতুন বিতর্ক। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা দায়ের করলেন বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। যদিও এনিয়ে ভীত নন কুণাল। হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, এক ইঞ্চিও পিছোবেন না। বরং 'রাজীব কুমার মডেল' -এর উদাহরণ টেনে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, "কোর্টে দেখা হবে!"
সূত্রের খবর, মিঠুনের দাবি— কুণাল ঘোষ বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যম ও জনসভায় তাঁর সম্পর্কে একাধিক ভিত্তিহীন মন্তব্য করেছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করতে গিয়ে তিনি অভিনেতা মিঠুনকে ব্যক্তিগতভাবে অপমান করেছেন। মিঠুনের অভিযোগ, তিনি চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে জড়িত বলে মন্তব্য করেন কুণাল। এমনকি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে শুধুমাত্র নিজেকে বাঁচানোর জন্য যোগ দিয়েছেন তিনি, এমন মন্তব্যও করেছেন তৃণমূল নেতা।
এখানেই শেষ নয়। বিজেপি নেতার অভিযোগ, তাঁর ছেলে ধর্ষণ মামলার সঙ্গে যুক্ত, তাঁর স্ত্রী আর্থিক লেনদেনে জড়িত বলে প্রচার করেছেন কুণাল, যা সত্য নয়। মিঠুনের বক্তব্য, এইসব মন্তব্যে জনসম্মুখে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। নতুন চলচ্চিত্র এবং বিজ্ঞাপনের কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে। এমনকি, তাঁর এখনকার কাজের উপরেও প্রভাব পড়েছে। পেশাগত ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তিনি। তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়ে তিনি ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
অন্যদিকে, মিঠুনের এই পদক্ষেপে বিন্দুমাত্র বিচলিত নন কুণাল ঘোষ। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “আমি ভয় পাইনি। ভয় পাবও না। যেটা বলেছি, তার পিছনে যথেষ্ট প্রমাণ আছে। আদালতেই সবটা দেখাব। রাজনৈতিক কারণে এই মামলা করা হয়েছে। আমাকে চুপ করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু আমি কোর্টেই এর জবাব দেব।”
শুক্রবার এই বিষয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে কুণাল জানান, তিনি মিঠুনের মানহানির মামলার মোকাবিলা করবেন ‘রাজীব কুমার মডেল’ অনুসরণ করে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে সারদা মামলায় পুলিশকর্তা রাজীব কুমারের সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে কুণালকে জেরা করেছিল সিবিআই। সেই সময় সিবিআইয়ের কাছে কুণাল আর্জি জানিয়েছিলেন, তিনি রাজীবের মুখোমুখি বসতে চান। মেঘালয়ের শিলং শহরে হয়েছিল সেই জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব।
মিঠুনের ক্ষেত্রেও সেই মডেল অনুসরণ করতে চান কুণাল। তিনি বলেন, ‘‘আমি আদালতে গিয়ে বলব, আমায় মিঠুনদার মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হোক। সাক্ষী হিসাবে হাজির থাকুন সিবিআইয়ের এসপি।’’ কুণাল এ-ও বলছেন, ‘‘আমার কাছে আরও এমন সাক্ষী আছেন, যাঁরা কোর্টে গিয়ে দাঁড়ালে মিঠুনদার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।’’
যদিও শুক্রবার পর্যন্ত মিঠুনের মামলার কোনও আইনি নোটিশ তাঁর কাছে এসে পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন কুণাল। তবে ইতিমধ্যেই সারদা, রোজভ্যালি-সহ বিভিন্ন চিটফান্ডের সঙ্গে মিঠুনের লেনদেন সংক্রান্ত কাগজপত্র বার করে গুছিয়ে রাখছেন তিনি বলে জানা গেছে।
কুণালের কথায়, ‘‘অভিনেতা মিঠুনদাকে প্রণাম। একটা সময়ে দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল, সেটাও আলাদা বিষয়। কিন্তু এখন যে তিক্ততা উনি শুরু করেছেন, তাতে ওঁকে কাঁদিয়ে ছাড়ব!’’ তিনি কি প্রস্তুতি নিচ্ছেন? কুণালের জবাব, ‘‘প্রস্তুতি নয়। চ্যালেঞ্জ নিচ্ছি, চ্যালেঞ্জ!’’
এদিকে আদালত সূত্রে খবর, মিঠুন এই মামলায় ৫০ হাজার টাকা ‘কোর্ট ফি’ দিয়েছেন। সাধারণত যা সর্বোচ্চ হিসেবে ধরা হয়। তবে এখনও পর্যন্ত আদালত এই মামলার শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেননি। জানা যাচ্ছে, আগামী সপ্তাহে শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন