
"শিক্ষক না হতে পারলেও যাতে গ্রুপ সি-র চাকরি পান, তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি!" বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে 'অযোগ্য' চাকরিপ্রাপকদের উদ্দেশ্যে একথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 'অযোগ্য'দের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে তিনি জানান, এই বিষয়ে আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।
শুক্রবার শিক্ষক দিবস। তার আগে বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতার ধনধান্য অডিটোরিয়ামে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে দেওয়া হয় 'শিক্ষারত্ন সম্মান'। ২০২৫ সালের কৃতী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানেই উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সেখানে থেকে এদিন অযোগ্যদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘১০ বছর শিক্ষক হিসাবে কাজ করার পরেও যাঁদের আজ অযোগ্য বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমরা তাঁদের নিয়ে আইনত আলোচনা করছি। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী হয়তো তাঁরা আর শিক্ষক হতে পারবেন না, কিন্তু তাঁরা যাতে অন্তত গ্রুপ সি-র চাকরি পান, বা সেই পর্যায়ের কোনও চাকরি পান, তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। তাঁদের হতাশ হতে বারণ করব। আমাদের সরকার মানবিক সরকার। আমরা রাজনীতি দেখে কাজ করি না, মানুষের কথা ভেবে কাজ করি"।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘‘আমাদের শিক্ষক পদে এখনও মোট ৫৬ হাজার শূন্যপদ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫,৭২৬টি পদের জন্য বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে। আরও ২১ হাজার পদ খালি রয়েছে। আমরা নিয়োগ করতে চাই। কিন্তু আইনের জটিলতায় হচ্ছে না। যাঁরা আইনকে বেলাইন করে দিয়েছেন, তাঁদের জন্য হচ্ছে"।
এরপরেই তিনি বলেন, "আদালতকে দোষ দেব না। আমাদেরই মধ্যে কিছু কিছু লোক আছে, তাঁদের জন্য এমন হচ্ছে। কত লোকের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে গেল। যাঁরা চাকরি করতেন, যাঁরা ‘আনটেন্টেড’, তাঁদের জন্য আমরা ইতিমধ্যেই ভাবছি। তাঁদের কথা ভেবেই বয়সসীমা বৃদ্ধির কথা ভাবা হয়েছে। আমাদের হাত-পা বাঁধা। কিন্তু আমরা তাঁদের সুযোগ দিচ্ছি, যাতে তাঁরা পরীক্ষা দিয়ে চাকরিতে ফিরতে পারেন।’’
অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের সাফল্যের কথাও তুলে ধরেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সময় শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় এক লক্ষ ৫০ হাজার নিয়োগ হয়েছে। এ ছাড়াও দশ হাজার অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়েছে। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার সময় রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র ১২টি, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭-এ। আরও পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব রাজ্যপালের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। পাশাপাশি, ১৪টি নতুন মেডিক্যাল কলেজ গড়া হয়েছে।’’
পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘উচ্চশিক্ষার জন্য স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ পেয়েছেন ৩৬ লক্ষ ৫৫ হাজার ছাত্রছাত্রী। কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ৪৪ লক্ষ জন। দশ লক্ষ ছেলেমেয়ে চাকরিও পেয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া, স্কিল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে রাজ্যে। সংখ্যালঘুদের জন্যও বৃত্তির ব্যবস্থা আছে। প্রায় ৪ কোটি ৫৬ লক্ষ ছাত্রছাত্রী স্কলারশিপ পাচ্ছেন। পুরোটাই দিয়েছে রাজ্য সরকার। ৯,৭৪৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়াও ৪০ হাজার ছেলেমেয়েকে ৩১৬ কোটি টাকা শিক্ষাঋণ দেওয়া হয়েছে।’’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন