
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুষ্কৃতিদের বোমা এবং গুলির আঘাতে খুন হন নদীয়ার করিমপুরের তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি মতিরুল ইসলাম। এই ঘটনায় প্রথম থেকেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠেছিল। এবার মতিরুলের খুনের অভিযোগে নওদা থানায় ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল তাঁর পরিবার। সিআইডি তদন্তের দাবি জানিয়েছে মৃত তৃণমূল নেতার স্ত্রী।
ঘটনাটি ঘটেছে নওদার জামালপুরে। এই ঘটনায় রাজ্যের শাসকদলকেই দায়ী করেছেন খোদ নদীয়ার বিধায়ক তাপস সাহা। তাঁর অভিযোগ, খুনের নেপথ্যে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছে মুর্শিদাবাদের তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের খানের ভাগ্নে সফিউর জামান শেখ ওরফে হাবিব শেখ।
হাবিব ছাড়াও ১০ জন অভিযুক্তদের মধ্যে তালিকায় নাম রয়েছে ফিরোজ শেখ নামের এক ব্যক্তির। যে হাবিবের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলেই এলাকায় পরিচিত। এছাড়াও রয়েছে নওদা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শফিউজ্জামান শেখ ও নদিয়া জেলা পরিষদের সদস্য টিনা ভৌমিক সাহা। হাবিব এবং ফিরোজ ছাড়া বাকি ৮ জনই নদীয়ার বাসিন্দা।
সূত্রের খবর, ইটভাটার মালিকানা দখল নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ দুই গোষ্ঠীর মধ্যে কোন্দল চলছিল। মতিরুলের ছেলে নওদার একটি বেসরকারি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। তার সঙ্গে দেখা করতে মাঝেমধ্যেই নওদা যেতেন মতিরুল। বৃহস্পতিবারও সেখানে গিয়েছিলেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছেলের সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় মোটরবাইক আটকে বোমা মারা হয় মতিরুলকে। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁকে গুলি করে দুষ্কৃতিরা। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত কিনা তা জানতে হাতের শিরায় ব্লেড চালানো হয়।
গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জেরেই ওই তৃণমূল নেতার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ব্যবসায়িক অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরেই এই খুন কিনা সেই প্রশ্নই তুলছে বিরোধীরা।
এই প্রসঙ্গে রাজ্যের শাসকদল এবং পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকাকে কাঠগড়ায় তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তাঁর কথায়, "ইটভাটা নিয়ে মারামারি, সবাই জানে ব্যাপারটা। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, পয়সার ভাগ, ইটভাটার মালিক সব এরা। হঠাৎ করেই চুরি, বাটপারি করে এদের পয়সা হয়ে গেছে। তার ফলস্বরূপ গোলাগুলি চলছে নিজেদের মধ্যে।"
কংগ্রেস নেতা আরও বলেন, "বাংলায় এইরকম দৃশ্য অহরহ ঘটতে থাকবে এখন। এটাই বাংলায় তৃণমূলের সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারা বাংলা জুড়ে নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি, মারামারি চলছে। মুর্শিদাবাদই বা বাদ যাবে কেন! তাই মুর্শিদাবাদেও হবে, নদীয়াতেও হবে। নদীয়ার ঝড় আছড়ে পড়ছে মুর্শিদাবাদের বর্ডারে। নেতা নদীয়ার, তাঁর পার্টনার মুর্শিদাবাদের। পুলিশ তদন্ত করলেই সব দেখতে পাবে। জানি না অবশ্য তাঁদের ধরার মত ক্ষমতা আদেও পুলিশের আছে কিনা!"