রাতে মেয়েদের না বেরোনোর পরামর্শ! দুর্গাপুর-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সেলিমের

People's Reporter: মহম্মদ সেলিম বলেছেন, “এত রাতে মেয়েরা কেন বেরোবে, এই প্রশ্ন তো দক্ষিণপন্থীদের ভাষা। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে বিজেপি আর আরএসএস-রা এই কথা বলে। আজ তৃণমূল সেই পথেই হাঁটছে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মহম্মদ সেলিম
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মহম্মদ সেলিম
Published on

দুর্গাপুরে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ পড়ুয়াকে গণধর্ষণের ঘটনায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড় উঠেছে। রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "বেসরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের উচিত হয়নি মেয়েদের রাতের বেলা বেরোতে দেওয়া।" এই মন্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

রবিবার দমদম বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “স্তম্ভিত করে দেওয়ার মতো ঘটনা। ওই মেয়েটি একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়ছিল। বেসরকারি কলেজে কার দায়িত্ব? রাত সাড়ে ১২টায় বেরলো কী করে? আমি যতদূর জানি জঙ্গলের মধ্যে ঘটেছে ঘটনাটি। তদন্ত চলছে। আমি হতবাক। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিকে সতর্ক হতে হবে। পড়ুয়াদের টেক কেয়ার (দেখভাল) করতে হবে। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে রাতের বেলা বেরোতে দেওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে ছোট মেয়েদের। নিজেদের রক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে জঙ্গল এলাকায়।"

পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ঘটনাটি রাত সাড়ে বারোটায় ঘটেছে, কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ওই ছাত্রী কলেজ থেকে রাত ৭টা ৫৮ মিনিটে বেরিয়েছিলেন এবং রাত ৯টা ২৯ মিনিটে ফিরে আসেন। ওই সময়ের মধ্যেই ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে।

মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ রাজ্যের বহু মানুষ। তাঁদের মতে, এই মন্তব্য শুধু অসংবেদনশীলই নয়, বরং দায় এড়ানোর প্রবণতা প্রকাশ করছে। শিক্ষাবিদ মালিনী ভট্টাচার্য বলেন, “সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব এড়িয়ে মেয়েদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে। যে দোষ অপরাধীদের, তা নির্যাতিতার উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে মেয়েরা আরও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বেন এবং অপরাধীরা পাবে অজুহাত।”

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সেদিন রাত ৮টা ৪২ মিনিটে নির্যাতিতার সহপাঠী একাই ফিরেছিলেন ক্যাম্পাসে। কিছুক্ষন পায়চারি করে তিনি আবার ৮টা ৪৮ মিনিটে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যান। রাত ৯টা ২৯ মিনিটে সেই সহপাঠীর সঙ্গে নির্যাতিতা ফিরে আসেন ক্যাম্পাসে। ৯টা ৩১ মিনিটে নির্যাতিতা ছাত্রী হস্টেলে চলে যান। পুলিশ ওই সহপাঠীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

প্রাথমিকভাবে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজন ওড়িশার বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। ঘটনাস্থল দুর্গাপুর শহরের উপকণ্ঠে, যেখানে সন্ধ্যার পর থেকেই নিয়মিত কিছু যুবক প্রকাশ্যে মদ্যপান ও নেশা করে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ সক্রিয় থাকলে এমন অপরাধ ঘটত না।

ধর্ষণ নিয়ে এর আগেও একাধিকবার বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন মমতা ব্যানার্জি। ২০১২ সালে কাটোয়ায় চলন্ত ট্রেনে এক মহিলাকে ধর্ষণের ঘটনায় তিনি সেটিকে ‘ছোট ঘটনা’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। ২০২২ সালের হাঁসখালি কাণ্ডে তিনি বলেছিলেন, “আপনি রেপ বলবেন, না কি প্রেগনেন্ট বলবেন, না কি লাভ অ্যাফেয়ার বলবেন?” সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরনের মন্তব্য সমাজে ভিকটিম-ব্লেমিং-এর সংস্কৃতি তৈরি করে, যেখানে অপরাধীর দায় আড়াল হয়ে যায়, আর মেয়েদের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

রবিবারই বর্ধমানে ডিওয়াইএফআই আয়োজিত ‘ইনকিলাব যাত্রা’ শেষে সভায় সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, “ধর্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মেয়েদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। এত রাতে মেয়েরা কেন বেরোবে, এই প্রশ্ন তো দক্ষিণপন্থীদের ভাষা। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে বিজেপি আর আরএসএস-রা এই কথা বলে। আজ তৃণমূল সেই পথেই হাঁটছে।”

তিনি আরও বলেন, “রাজ্যের প্রশাসন পুরোপুরি ব্যর্থ। পুলিশের কাজ এখন কয়লা-বালি পাচারকারীদের সুরক্ষা দেওয়া। মুখ্যমন্ত্রী সেই ব্যর্থতাকে ঢাকতে অপরাধের দায় মেয়েদের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন।”

আর জি কর ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আর জি কর হাসপাতালে অভয়াকে ধর্ষণ ও খুনের পর আমরা ‘রাত দখল’ আন্দোলন করেছিলাম। আজ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই মেয়েদের রাতে স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এটা লজ্জাজনক।” তাঁর মতে, “দক্ষিণপন্থীদের উত্থান মানেই নারী স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ। তৃণমূল এখন সেই একই পথে।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মহম্মদ সেলিম
Kolkata: নিউ টাউনের বিশ্ববিদ্যালয়ে সিকিমের পড়ুয়াদের জাত তুলে কটূক্তি ও মারধরের অভিযোগ! তদন্তে পুলিশ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মহম্মদ সেলিম
UP: “৫০ টুকরো হয়ে যাবেন!” লিভ-ইন সম্পর্ক নিয়ে ফের বিতর্কিত মন্তব্য উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপালের

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in