

এবার থেকে রাজ্যের স্কুলগুলির গ্রন্থাগারে মিলবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বই। জানা গেছে, সরকারি এবং সরকার-পোষিত স্কুলের গ্রন্থাগারে মুখ্যমন্ত্রীর ১৯টি বই রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষাদপ্তর। ইতিমধ্যেই ২৩টি জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে পাঁচটি সেট-এ ভাগ করে তালিকা পাঠানো হয়েছে। তালিকায় সবমিলিয়ে মোট ৫১৫টি বই রয়েছে। এরপর থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। কেন গ্রন্থাগারে মুখ্যমন্ত্রীর বই রাখা হবে - তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে শিক্ষক মহলে।
শিক্ষাদপ্তরের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেছেন শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের স্কুলগুলির গ্রন্থাগারের জন্য অর্থ অনুদানের পাশাপাশি ৫১৫টি বই গ্রন্থাগারে রাখার শর্ত দিয়েছে রাজ্য সরকার। তার মধ্যে প্রায় ৯০টির কাছাকাছি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের লেখা বই! আমরা নজিরবিহীন এই নির্দেশের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে এই শর্ত তুলে নিতে হবে"।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘ক্ষমতায় থাকাকালীন আমাদের রাজ্যের কোনও মুখমন্ত্রীর ক্ষেত্রে তো দূরের কথা, ভারতের কোনও রাজ্যেও এই দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। ক্ষমতাকে ব্যবহার করে এ ভাবে স্কুলগুলোর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ কখনোই সমর্থন যোগ্য নয়। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার"।
তবে এই ঘটনাকে সমর্থন জানিয়েছেন অনেকে। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি বিজন সরকার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বই রাখা নিয়ে অসুবিধা কোথায়! রাজনীতির পাশাপাশি কেউ সাহিত্যচর্চা করতেই পারেন। মুখ্যমন্ত্রীর বই অনেক বেশি বিক্রি হয়। অর্থাৎ পাঠকের চাহিদাও রয়েছে। পাঠক ঠিক করবে কার বই রাখা হবে কার রাখা হবে না। তাঁর বই রাখা নিয়ে অসুবিধা হওয়া কাম্য নয়’’।
২০২৬ সালে রাজ্যের সরকারি এবং সরকার-পোষিত মাধ্যমিক এবং উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুলগুলিকে মোট ২০ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা গ্রান্ট দিচ্ছে রাজ্য সরকার। যেখানে প্রতিটি স্কুলের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১ লক্ষ টাকা। মূলত স্কুলে গ্রন্থাগার উন্নতির স্বার্থেই এই টাকা দেওয়া হয়েছে স্কুল দফতরের পক্ষ থেকে।
তবে এবার গ্রন্থাগারে কী কী বই রাখা হবে, তার একটি খসড়া পাঁচটি সেটে ভাগ করে ২৫টি স্কুল জেলাপরিদর্শকের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি সেটে ৫১৫টি বইয়ের নাম দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকায় স্বামী বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আইনস্টাইনের লেখা বইয়ের সঙ্গে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ১৯টি বইও।
সেই বইগুলি হল - 'কন্যার চোখে কন্যাশ্রী', 'বিকেলটা হারিয়ে গেছে', 'আমার পাহাড়', 'আমার জঙ্গল', 'চোখের তারা', 'জীবন সংগ্রাম', 'কুৎসাপক্ষ', 'এক পলকে, এক ঝলকে', 'সোজাসাপটা', 'কথায় কথায়', 'পরিবর্তন', 'নন্দীমা', 'অনশন কেন?', 'জাগো বাংলা', 'একান্তে', 'আন্দোলনের কথা', 'অশুভ সংকেত', 'অনুভূতি', 'সেরা মমতা একত্র'।
প্রথম সেট পাঠানো হয়েছে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, মালদা, শিলিগুড়ি এবং উত্তর দিনাজপুরে। দ্বিতীয় সেট - বাঁকুড়া, বীরভূম, ঝাড়গ্রাম এবং পুরুলিয়া। তৃতীয় সেট - দক্ষিণ দিনাজপুর, হুগলি, নদিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর। চতুর্থ সেট - হাওড়া, কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বর্ধমান এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা। এবং পঞ্চম সেট - উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমান এবং পূর্ব মেদিনীপুর।
KEYWORDS: Mamata banerjee, West Bengal, TMC, Book
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন