
ছ’বছর আগে প্রকাশিত এক কার্টুনের জন্য পরপর দু’বার নোটিশ পেলেন প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট মঞ্জুল। তিনি জানিয়েছেন, মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স থেকে তাঁকে নোটিশ পাঠানোর আগে তিনি একই নোটিশ পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকেও এবং তাঁকে ওই কার্টুন তুলে নিতে বলা হয়েছে। ছ’বছর আগের ওই কার্টুন ছিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কিত। এই ঘটনার পর শিল্পী নিজের এক্স হ্যান্ডেলে ওই নোটিশ পোষ্ট করে স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন, ‘মমতা এবং বিজেপি-কে যারা আলাদা মনে করেন তাদের জন্য’।
যে কার্টুন নিয়ে বিতর্ক তা প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৯ সালে এক অনলাইন পোর্টালে। ২০১৯ সালের ওই কার্টুন তৈরি করা হয়েছিল, লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) থেকে ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপি) ব্যাপকভাবে দলত্যাগের ঘটনা নিয়ে। পরে মঞ্জুল কার্টুনটি নিজের এক্স হ্যান্ডেল (পূর্বতন ট্যুইটার)-এ পোষ্ট করেছিলেন।
এক্স-এর পক্ষ থেকে শিল্পী মঞ্জুলকে জানানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তাদের চিঠি দিয়েছে। যদিও এক্স ওই কার্টুন মুছে দেয়নি। জানা গেছে, যে দুটি কার্টুন মুছে দিতে বলা হয়েছে তার একটি ছিল দলবদল নিয়ে এবং অন্যটি ছিলো চিট ফান্ড দুর্নীতি নিয়ে। দুটি কার্টুনেরই কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুটি কার্টুনকেই রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বলা হয়েছে।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে কলকাতার এক সংবাদপত্রকে শিল্পী মঞ্জুল জানিয়েছেন, "ছ’বছর পর হঠাৎ করেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার আপত্তি তুলছে, যা খুবই অবাক করার মতো বিষয়।" "ছয় বছর পর একটি কথিত অপরাধের প্রতি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ যে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে তা অদ্ভুত, যদিও আমি নিশ্চিত যে আমি কোনও ভুল করিনি।"
শিল্পী মঞ্জুলকে যে চিঠি এক্স পাঠিয়েছে তাতে লেখা আছে, “স্বচ্ছতার স্বার্থে, আমরা আপনাকে জানাতে চাই যে X আপনার X অ্যাকাউন্ট, @MANJULtoons সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গ সাইবার ক্রাইম উইং থেকে একটি অনুরোধ পেয়েছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে নিম্নলিখিত বিষয়বস্তু ভারতের আইন(গুলি) লঙ্ঘন করে।”
ওই চিঠিতে দুটি ‘বিতর্কিত’ পোস্টের লিঙ্ক দিয়ে বলা হয়েছে: “আমরা এই মুহূর্তে রিপোর্ট করা বিষয়বস্তুর উপর কোনও পদক্ষেপ নিইনি... যেহেতু X আমাদের ব্যবহারকারীদের বক্তব্য রক্ষা এবং সম্মান করতে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, তাই আমাদের নীতি হল যদি আমরা কোনও অনুমোদিত সংস্থার কাছ থেকে তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে বিষয়বস্তু অপসারণের জন্য আইনি অনুরোধ পাই তা আমাদের ব্যবহারকারীদের অবহিত করা।”
এই ঘটনা রাজ্যের ২০১২ সালের কার্টুন মামলার কথা মনে করায়। সেইসময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ অম্বিকেশ মহাপাত্রকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার তৎকালীন সহযোগী মুকুল রায়কে নিয়ে একটি ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন ফরোয়ার্ড করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে, সুপ্রিম কোর্ট ডঃ মহাপাত্রের বিরুদ্ধে আরোপিত তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারা খারিজ করে দেয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন