
নদীয়ার কালীগঞ্জে বোমার আঘাতে নাবালিকা মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। সরাসরি অভিযোগের তীর তৃণমূলের দিকে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই চার জনকে গ্রেফতার করেছে কৃষ্ণনগর থানার পুলিশ। অন্যদিকে, নিহত নাবালিকার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সমস্ত দোষীদের গ্রেফতারির জন্য ২৪ ঘন্টা সময় বেঁধে দিয়েছে সিপিআইএম। নেতৃত্বের তরফে পুলিশকে হুঁশিয়ারি, "সব দোষীদের গ্রেফতার ও বোমা উদ্ধার না করা পর্যন্ত থানা ছাড়ব না"।
গত ১৯ জুন কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হয়। সোমবার ছিল ভোটগণনা। গণনার প্রথম থেকেই প্রতিটি রাউন্ডেই এগিয়ে ছিল তৃণমূল এবং প্রত্যাশিতভাবেই জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী আলিফা আহমেদ। যেহেতু আগামী ২০২৬-এ রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন তাই এই নির্বাচন ঘিরে সেভাবে কোনও রাজনৈতিক উত্তাপ ছিলনা। তা সত্ত্বেও ফলাফল ঘোষণার পরেই শাসকের উল্লাসের বলি হল এক নাবালিকা, বলছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কালীগঞ্জে জয় নিশ্চিত হয়ে যাবার পর চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই বিজয় মিছিল বের করে স্থানীয় তৃণমূল। আর সেই বিজয়মিছিল থেকেই বোমা ছোঁড়া হয় এক সিপিআইএম সমর্থকের বাড়ি লক্ষ্য করে। যে বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় বছর দশেকের তামান্না খাতুনের। ঘটনাটি ঘটেছে কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত পলাশীর মেলেন্দি এলাকায়।
এই ঘটনার পরই স্থানীয় থানা ঘেরাও করে সিপিআইএম-এর ছাত্র-যুব সংগঠন। বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন মীনাক্ষী মুখার্জি। ধিক্কার মিছিলও করেন সিপিআইএম নেতৃত্ব। এই ঘটনায় মীনাক্ষী মুখার্জি পুলিশকে সময় বেঁধে দিয়ে বলেন, "সমস্তটাই ভিডিওতে আছে। আপনারা দেখুন এবং মেয়েটির মা-কে ব্যাখ্যা দিন। পারবেন মেয়েটিকে ফিরিয়ে দিতে? আমরা ২৪ ঘন্টা সময় দিলাম। এর মধ্যে সমস্ত বোমা উদ্ধার করুন, দোষীদের গ্রেফতার করুন। ২৪ ঘন্টা পরে আমরা আবার থানায় আসব"।
মেয়ের মৃত্যুতে থানায় কর্তব্যরত পুলিশের সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মা সকিনা বিবি। তিনি বলেন, "আমার মেয়ে কী দোষ করল বলুন। ও মরলো কেন জবাব দিন"। পুলিশের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, "ওই শয়তানদের চেনেন তো, এলাকায় ভয় দেখায়, আগে থেকে ব্যবস্থা কেন নেননি?''
এই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে গ্রামবাসীরাও। তাদের দাবি, "বোমা ছোঁড়া আর বিজয় উল্লাসের সংযোগ কী?" এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমি দেখেছি কারা বোমা ছুড়েছে। আমরা সিপিএম করি। ওদের নাম না-জানলেও সকলের মুখ চেনা, সবাই তৃণমূল করে"।
অন্যদিকে, এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার তরফ থেকে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে জানানো হয় অভিযুক্তদের গ্রেফতারির বিষয়টি। ধৃতেরা হলেন আদর শেখ, মানোয়ার শেখ, কালু শেখ এবং আনওয়ার শেখ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রজু করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃতদের মঙ্গলবারই আদালতে তোলা হবে।
কৃষ্ণনগর পুলিশ সুপার অমরনাথ কে জানিয়েছেন, ২০২৩ সাল থেকেই ওই এলাকায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। সেই দ্বন্দ্ব থেকেই এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ময়নাতদন্তের ও ফরেন্সিক রিপোর্ট এলে পুরো ঘটনাটি জানা যাবে।
অন্যদিকে, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখার্জি। কালীগঞ্জের থানার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, "রাজ্যে গুন্ডারাজ কায়েম করেছে তৃণমূল। এই পুলিশের ছাতা যদি তৃণমূলের মাথার উপর না থাকে, তাহলে এই গুন্ডাগিরি করতে পারে না"। তিনি আরও বলেন, "এটা কিসের বিজয় উল্লাস? যেখানে একজন শিশুকে খুন করে দিল তৃণমূলের দুষ্কৃতিরা। এই কারণেই কি নদিয়ায় ভোটে জিতেছে তৃণমূল?"
কালীগঞ্জের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি। সোমবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে তিনি লেখেন, "তৃণমূলের বিজয় উৎসব থেকে বোমা ছুঁড়ে দশ বছরের তামান্না খাতুনের নৃশংশ হত্যার ঘটনায় আমরা মর্মাহত। এটাই তৃণমূল শাসনের আসল রূপ। আমারা তামান্নার পরিবারের পাশে আছি এবং হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচারের দাবি করছি"।
ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এই ঘটনাকে তৃণমূলী নৃশংসতার নমুনা হিসাবে উল্লেখ করেছেন তিনি। সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী শাসক দলকে আক্রমণ করে বলেন, তৃণমূলের জয় আসলে বীভৎসতার জয়।
অন্যদিকে, প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি শুভঙ্কর সরকার ঘটনার নিন্দা করে এই নৃশংস ঘটনায় অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনের কাছে ওই বিজয়ী প্রার্থীর শংসাপত্র বাতিল করে তাঁকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন