ছট পুজো ঘিরে ধর্মীয় রাজনীতি বিজেপির! দলীয় প্যাডে মাছ–মাংস বিক্রি বন্ধের নির্দেশ অন্ডালে

People's Reporter: চিঠি পাঠিয়েই থেমে থাকেনি গেরুয়া বাহিনী। শনিবারই স্থানীয় মাংস বিক্রেতা অজয় মণ্ডলকে দু'দিন দোকান বন্ধ রাখার জন্য ফতোয়া শুনিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আপত্তি করায় তাঁকে হুমকির মুখে পড়তে হয়।
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবিছবি - সংগৃহীত
Published on

ছট পুজো ঘিরে ফের মাথাচাড়া দিল ধর্ম নিয়ে রাজনীতি। এবার সরাসরি দলীয় প্যাডে পুলিশকে চিঠি লিখে ছট পুজোর দু'দিন মাছ–মাংস বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করেছে বিজেপি। অন্ডাল সাউথ বাজার এলাকার ঘটনা। শুধুই লিখিত বার্তা নয়, স্থানীয় বাজারে ঘুরে দোকানদারদের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ। এর জেরে এলাকায় তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য ও উত্তেজনা।

ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার ব্যস্ততম বহু পুরাতন অন্ডাল সাউথ বাজারে। শনিবার বিজেপি-র আসানসোল জেলা (পশ্চিম বর্ধমান জেলাকে বিজেপি আসানসোল জেলা বলে) রানিগঞ্জ মণ্ডল-৪ সভাপতি রাখালচন্দ্র দাস থানায় চিঠি দিয়ে ছট পুজোর দুই দিন অর্থাৎ রবিবার ও সোমবার বাজারে সমস্ত আমিষ দোকান বন্ধ রাখার কথা জানান।

যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, ওই পথ দিয়েই দামোদর নদে পুজো দিতে যাবেন ছট ব্রতীরা। তাই তাঁদের অসুবিধা এড়াতে এই সিদ্ধান্ত। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, যে রাস্তা দিয়ে ব্রতীরা যান, তা যথেষ্ট চওড়া এবং সকাল-সন্ধ্যা ছাড়া বাজার বসেও না। ফলে বিষয়টি ধর্মীয় আবেগ উস্কে রাজনৈতিক লাভ তোলার চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়।

চিঠি পাঠিয়েই থেমে থাকেনি গেরুয়া বাহিনী। শনিবারই স্থানীয় মাংস বিক্রেতা অজয় মণ্ডলকে দু'দিন দোকান বন্ধ রাখার জন্য ফতোয়া শুনিয়েছে তারা। তিনি আপত্তি করায় তাঁকে হুমকির মুখেও পড়তে হয়। এরপর রবিবার সকালে অজয় মণ্ডল সহ অন্যান্য আমিষ বিক্রেতাদের দোকানে কয়েকজন বিজেপি কর্মী গিয়ে দোকান বন্ধের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।

অজয় মণ্ডল আপত্তি জানালে তাঁকে হুমকির মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে এর প্রতিবাদ জানান। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হস্তক্ষেপ করে। পুলিশের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়, “কেউ আইন অনুযায়ী ব্যবসা করলে, দোকান খোলা বা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত তাঁর ব্যক্তিগত অধিকার।”

অন্ডাল সাউথ বাজারে বিভিন্ন ধর্ম ও ভাষাভাষী মানুষের বসবাস। এলাকার মানুষ বছরের পর বছর সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রেখেই উৎসব পালন করেছেন। স্থানীয়দের বক্তব্য, “ছট পুজো বহুদিন ধরে হচ্ছে, কখনও এমন বাধা হয়নি। এবার কেন এই নির্দেশ?”

এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সিপিআইএম। সিপিআইএম নেতা প্রবীর মণ্ডল বলেন, “এই ঘটনা বিজেপি ও তৃণমূলের বোঝাপড়ার ফল। ভোটের মুখে বিভাজনের রাজনীতি জিইয়ে রাখতে চাইছে দুই দলই। কে কী খাবে, কী পোশাক পরবে—এসব নিয়ে ফতোয়া জারি করে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ ছড়ানো হচ্ছে। এটা শিল্পাঞ্চলের ঐতিহ্যের পরিপন্থী।”

এর আগে এপ্রিল মাসে দীঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের সময়ও সেখানকার কিছু হোটেলে আমিষ পরিবেশন বন্ধ রাখার মৌখিক নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। তবে সরকারি ভাবে নয়। এমনকি মুসলিম পর্যটকরা যদি হোটেলে থাকেন তাদের সকাল দশটার পর হোটেল থেকে বেরোনো যাবে না বলেও বলা হয়েছিল। যদিও কোনও লিখিত নির্দেশ দীঘা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি।

একইভাবে দোলযাত্রার সময় নবদ্বীপ পৌরসভাও (তৃণমূল পরিচালিত) আমিষ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। সরকারি প্রশাসন তখনও নীরব ছিল বলে অভিযোগ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ধর্মীয় আবেগকে হাতিয়ার করে ভোটের রাজনীতি এখন এক অদ্ভুত আকার নিচ্ছে। একদিকে তৃণমূল, অন্যদিকে বিজেপি, উভয় পক্ষই নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক মজবুত করতে ধর্মীয় বিভাজনের কার্ড খেলছে। কিন্তু তার আঘাত লাগছে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের জীবনে।

প্রতীকী ছবি
ছট পুজো উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর স্নানের জন্য বিশুদ্ধ জলের 'নকল' যমুনা তৈরি! ভিডিও প্রকাশ আপের
প্রতীকী ছবি
Special Intensive Revision: ১২ রাজ্যে SIR-এর সূচী ঘোষণা করলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার - দেখুন এক নজরে

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in