
কসবার ল কলেজে গণধর্ষণ নিয়ে গতকালই মুখ খুলেছিলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। একইভাবে এই ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ খুলেছিলেন তৃণমূলের কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রও। যদিও শনিবার তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এক্স হ্যান্ডেলে পোষ্ট করে জানানো হয় মদন মিত্র ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য তাঁদের ব্যক্তিগত মন্তব্য এবং এর সঙ্গে সহমত নয় তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দলের পক্ষ থেকে এই বিবৃতির পরেই আবারও মুখ খুলেছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ। যে বিবৃতি ঘিরে আরও একবার প্রকাশ্যে এসে তৃণমূলের আভ্যন্তরীণ কোন্দল।
শুক্রবার শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “একজন ছাত্রীকে যদি তার সহপাঠীরা রেপ করে থেকে দুঃখের খবর আর কি হতে পারে।” কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই মন্তব্য করার পরেই শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। অস্বস্তিতে পড়ে তৃণমূল। সাধারণ মানুষ কড়া প্রতিক্রিয়া জানান সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এরপরেই শবিবার ফের বিতর্কিত মন্তব্য করেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। তিনি বলেন, “কসবার এই ঘটনায় মেয়েদের কাছে, পড়ুয়াদের কাছে একটা বার্তা পৌঁছে গিয়েছে। যদি চেনা-পরিচিত কেউ ডাকে, যেদিন কলেজ বন্ধ, পরীক্ষা চলছে, ইউনিটের কিছু বানিয়ে দেবে, যেও না, ভালো হবে না। মেয়েটি ওখানে না গেলে এই ঘটনা ঘটত না। যদি যাওয়ার সময় কাউকে বলে যেত, ২ জন বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে যেত, তাহলে এই ঘটনা ঘটত না। যে এই নোংরা কাজ করেছে, সে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে।” তৃণমূল বিধায়কের এই মন্তব্য নিয়েও ক্ষোভে ফেটে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা।
চরম অস্বস্তিতে পড়ে শনিবার তৃণমূলের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বিবৃতিতে জানানো হয় – “সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজে ঘটে যাওয়া নৃশংস ঘটনা প্রসঙ্গে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিধায়ক মদন মিত্র যে মন্তব্য করেছেন, তা তাঁদের ব্যক্তিগত মতামত। দল তাঁদের বক্তব্যের সঙ্গে কোনোভাবেই একমত নয় এবং এই মন্তব্যগুলিকে কড়াভাবে নিন্দা করছে। এই ধরনের বক্তব্য কোনওভাবেই দলের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে না। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট—মহিলাদের ওপর অপরাধের ক্ষেত্রে বরাবরই জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও করা হবে। যারা এই নৃশংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে যেন কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।” দলের এই বিবৃতিকে সমর্থন করে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন ট্যুইটার) সমর্থন জানিয়ে দোষীদের শাস্তি দাবি করেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও।
যদিও এরপরেই ফের সরাসরি দলের অবস্থানের বিরোধিতা করে ফের মুখ খুলেছেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার রাত ৯টা ১২ মিনিটে করা এক এক্স হ্যান্ডেল পোষ্টে কল্যাণ বলেন, 'X-তে তৃণমূল কংগ্রেসের করা পোস্টের সাথে আমি সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করছি। দল কি পরোক্ষভাবে সেই নেতাদের সমর্থন করছে যারা এই অপরাধীদের রক্ষা করছে?'
ওই পোষ্টেই তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ আরও জানিয়েছেন, “কেবলমাত্র একাডেমিক বিবৃতি দিয়েই কোনও বাস্তব পরিবর্তন আসবে না যদি না সরাসরি দায়ী নেতাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আরও দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল যে ২০১১ সালের পরে আবির্ভূত কিছু নেতা এই ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার জন্য প্রশ্নবিদ্ধ। আমি স্পষ্টতই তাদের থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চাই যারা এই অপরাধীদের উৎসাহিত করছে বা রক্ষা করছে। আমার কথা এবং বিবৃতির পিছনের উদ্দেশ্যটি সত্যিকার অর্থে বুঝতে হলে, একটি নির্দিষ্ট স্তরের নৈতিক এবং বৌদ্ধিক সমন্বয় প্রয়োজন - যা দুর্ভাগ্যবশত, অনুপস্থিত বলে মনে হচ্ছে।”
রাজনৈতিক মহলের মতে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য কার্যত সরাসরি দলের অবস্থানের বিরোধিতা করা। যদিও তিনি মহুয়া মৈত্রের মন্তব্যের বিরোধিতা করতে গিয়েই একথা বলেছেন বলে অন্য একটি অংশের মত। এর আগে গত এপ্রিল মাসে মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবাদ সংবাদ শিরোনামে এসেছিল। কল্যাণ অভিযোগ করেছিলেন, দিল্লিতে তিনি বেশি জনপ্রিয় বলে 'ইন্টারন্যাশনাল লেডি' তাঁকে সহ্য করতে পারেন না। এমনকি ওই বিবাদের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল।
Keywords: TMC, Kasba incident, Kalyan Banerjee, Trinamool Congress, TMC internal conflict, West Bengal politics
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন