
কসবায় ল'কলেজের গণধর্ষণ মামলায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে নাম উঠে এসেছে "এম'-এর। জানা যাচ্ছে, তাঁর সঙ্গে যোগ রয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের। তিনি নাকি তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত। এমনকি বাকি দুই অভিযুক্তের সঙ্গেও যোগ রয়েছে তৃণমূলের। যা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই শাসক দলকে একযোগে আক্রমণ করছে বিরোধীরা। যদিও তৃণমূলের বক্তব্য, ধৃতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
এই ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সিপিআইএম নেতা শতরূপ ঘোষ। তিনি বলেন, "ধর্ষকদের দল তৃণমূলের যা করার তাই করেছে। আর জি করের পরে এবার খবরে কসবা। তৃণমূল নেতা এবং তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা মিলে রাতে কলেজে গিয়ে একটা মেয়েকে গণধর্ষণ করেছে। রাতে কলেজে তাঁরা কী করছিল? ধর্ষকে যা প্রশ্ন করার তা আদালত করবে। কিন্তু কলেজের প্রিন্সিপালেরা এর জবাব দেবে না। যাঁরা কেবল তৃণমূল কংগ্রেসের চটি চাটার যোগ্যতায় বিভিন্ন কলেজের প্রিন্সিপাল হয়ে বসে আছে। রাতে খোলা থাকে কেন কলেজ? কী হয় রাতে কলেজে? রাতে কলেজগুলো তৃণমূল্লের কোঠাবাড়ি হয়ে যায় কেন?"
পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার অর্থাৎ ২৫ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিটের মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে। এরপর কসবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতা। তল্লাশি চালিয়ে প্রথমে তালবাগান ক্রসিংয়ের কাছে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় শিশু উদ্যানের সামনে থেকে দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা নাগাদ মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে এক ফেসবুক পোষ্টে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, কসবার ধর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। এসব জানোয়ারকে মেরে পিঠের চামড়া গুটিয়ে দেওয়া উচিত। পুলিশ এদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করুক।... তৃণমূল কংগ্রেস এইসব বাঁদরামি বরদাস্ত করবে না।... একটি বিচ্ছিন্ন খারাপ ঘটনা দিয়ে কেউ দয়া করে সামগ্রিকতার মূল্যায়ন করবেন না।"
পুলিশ সূত্রে খবর, মূল অভিযুক্ত ওই কলেজের প্রাক্তনী। অভিযুক্তদের ‘জে’, ‘এম’ এবং ‘পি’ নামে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত 'এম'-এর সঙ্গে তৃণমূলের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্বের ছবি ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে তিনি তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত বলে লেখা রয়েছে। সেখানে নিজেকে তিনি দক্ষিণ কলকাতা জেলা টিএমসিপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া তিনি দক্ষিণ কলকাতা ল কলেজের তৃণমূলের ইউনিটের প্রেসিডেন্টও ছিলেন। পেশাগত দিক হিসেবে আলিপুর আদালতের 'ক্রিমিনাল লইয়ার' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এনিয়ে ওই কলেজের অধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায় শুক্রবার সকালে বলেছেন, ‘‘আমি বিষয়টি জানতাম না। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত আমাদের ক্লাস চলে। এই ঘটনা ঘটেছে তার অনেক পরে। এখন আমি কলেজে যাচ্ছি। তার পর বিষয়টি দেখছি। তবে এই ধরনের জঘন্য ঘটনার দায় কলেজ কোনও ভাবেই এড়িয়ে যাবে না। আইন অনুযায়ী যা শাস্তি হওয়া উচিত, তার ব্যবস্থা করা হবে"।
পরে কলেজে পৌঁছে তিনি সংবাদমাধ্যমে জানান, উনি কলেজের অস্থায়ী স্টাফ। গভর্নিং বডির নির্দেশে অস্থায়ী স্টাফ হিসেবে ৬-৭ মাস ধরে আছেন। ৪৫ দিন করে করে রাখা হয়েছে। উনি এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। ল'কলেজের ডিগ্রিও আছে। সেই মত অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছিল গভর্নিং বডি। কলেজের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কেন তিনি ক্যাম্পাসে ছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হবে। পুরো বিষয়টি জিবি প্রেসিডেন্টকে জানানো হয়েছে।
এই গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শান্তা দত্ত দে বলেছেন, ‘‘আইনজীবীর সঙ্গে কথা হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষকে লিখিত ভাবে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। ঘটনার পর কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা রিপোর্টে উল্লেখ করতে হবে"। মঙ্গলবারের মধ্যে তথ্য অনুসন্ধান কমিটি তৈরি করা হবে। তারপরে আচার্যকে লিখিত ভাবে জানানো হবে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আরও বলেন, ‘‘এটা একটা জঘন্য ঘটনা। তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। লুম্পেনদের রাজনৈতিক মদত দেওয়া হয় বলেই এই ধরনের ঘটনা কলেজগুলিতে ঘটে চলেছে। এর বিহিত হওয়া প্রয়োজন। অন্যান্য কলেজেও নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে। কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা যাতে না ঘটে, তা সুনিশ্চিত করা হবে"।
এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও যুব সংগঠনের সভাপতি সার্থক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে অভিযুক্তদের সঙ্গে টিএমসিপির যোগের কথা বলা হচ্ছে, তাঁরা ছাত্র পরিষদের পদাধিকারী নন। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি"।
সংবাদমাধ্যমে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তৃণমূলের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাক বা না থাক, দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি। যার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, সে বর্তমানে কলেজের কর্মচারী। ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত নয়। যদি এই ঘটনা এবং অভিযোগ সত্যি হয়, তার বিরুদ্ধে ১০০ শতাংশ আইনানুগ ব্যবস্থা যাতে নেওয়া হয় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যাতে হয়, তার জন্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদ লড়বে"।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন