
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে এসএসসির নয়া নিয়োগের দিনক্ষণ-সহ শূন্যপদ ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, শীর্ষ আদালতে রিভিউ পিটিশন জারি রাখা হবে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে। আদালতে গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ হলেই এই নিয়ে তৎপরতা শুরু হবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, আদালত যদি পরীক্ষা না নেওয়ার কথা জানায়, তাহলে সেটাই করা হবে। মমতার দাবি, "দু'টো দিকই খোলা রাখা হচ্ছে"।
মঙ্গলবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন আজ বিকাল ৫টায় চাকরিহারাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করতে চলেছেন তিনি। সেইমতো এদিন বিকাল ৫টায় নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি। এদিন বৈঠকের শুরুতেই সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ভুল বার্তা না ছড়ানোর বার্তা দেন দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘যাতে ভুল বার্তা না যায়, তাই। সকলকেই আইন মেনে চলতে হয়। রাজ্য রিভিউ পিটিশন করেছিল। বলেছি সকলকে যাতে চাকরি দেওয়া হয়, কারও যাতে চাকরি না যায়"।
এরপরেই তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট আগের নির্দেশে বলেছে। দু’টো ভাগ রয়েছে। শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। আমাদের করার ইচ্ছা ছিল, চাই যে চাকরিহারারা সকলে চাকরি ফিরে পাক। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সবটাই রেডি রাখব। কারও চাকরি যাওয়ার কথা আমরা সুপ্রিম কোর্টে বলিনি। অনেকে আলাদা ভাবে কোর্টে গেছেন। কোর্ট থেকে নেগেটিভ রিপোর্ট আসছে। এটা যে কেউ যেতে পারেন। এটা অধিকার। রাজ্য করলে সকলের স্বার্থ দেখতে হয়"।
মমতা বলেন, ‘‘আমরা অপেক্ষা করছিলাম। চাকরি খেতে চাই না। যেহেতু রিভিউ হয়নি, পিটিশন পেন্ডিং, কোর্টে গরমের ছুটি। আমাদের হাত বাঁধা। যদি কোর্ট বলে পরীক্ষা দিতে হবে না, তাহলে আমরা সেই মতো চলব। রিভিউ পিটিশনের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ৩১-এ মে পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তি প্রক্রিয়াও চলবে। ২টো প্রক্রিয়া চালু থাকবে। নির্দেশ মেনে বিজ্ঞপ্তি জারি করব। রিভিউতে ভাল ফল পেলে সেটা গ্রহণ করব"।
এরপরেই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, "রিভিউয়ের সুযোগ সব সময় খোলা রয়েছে। যতক্ষণ রিভিউ না হচ্ছে, বিজ্ঞপ্তি জারির প্রক্রিয়া চালানো হবে। আইনি পরামর্শ মেনে ৩০ মে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। যাঁরা অনলাইনে আবেদন করতে চান, পারবেন ১৬ জুন থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত"। নভেম্বরের মধ্যে কাউন্সেলিং করে গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেব"।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, "রিভিউ পিটিশনের সময় রেখে ১৫ নভেম্বর মেধাতালিকা প্রকাশ। কাউন্সেলিং হবে ২০ নভেম্বর। যদি রিভিউ না হয়। আমরা বলছি না, কোর্ট বলছে। লিখিত পরীক্ষা, ইন্টারভিউ সব প্রক্রিয়া করে নেব, যদি রিভিউতে বিচার না পেলে। ২৪,২০৩ পদ শূন্য। হাইকোর্টের নির্দেশে ওই পদের জন্য নিয়োগ হবে। অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হয়েছে। ১১,৫১৭ অতিরিক্ত শূন্য পদ তৈরি হয়েছে নবম-দশমের জন্য"।
মমতা জানান, "একাদশ-দ্বাদশের জন্য ৬,৯১২ অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের জন্য মোট ৪৪,২০৩ টি শূন্যপদ তৈরি। গ্রুপ-সির জন্য অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি হচ্ছে। ৫৭১টি পদ। গ্রুপ ডির জন্য অতিরিক্ত হাজার করা হচ্ছে। মোট শূন্য পদ ৪৪ হাজার ২০৩। নবম-দশম চাকরি হারাদের নিয়ে ২৩,২১২। একাদশ-দ্বাদশ ১২,৫১৪, গ্রুপ সি ২৯৮৯, গ্রুপ ডি ৫,৪৮৮"।
তবে বয়সের জন্য কাউকে আটকানো হবে না বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘‘সাধ্যমতো চেষ্টা করব। ভয় পাচ্ছেন কেন। যাঁরা ৪০ পেরিয়ে গেছেন, তাঁদের বয়সের সীমায় ছাড় দেওয়া হবে। আবেদন করব, দয়া করে মুখ বিকৃত করবেন না। আপনাদের আগে জানাব, তার পরে আমরা করব। সবাই যাতে জানতে পারে, তাই আগে থেকে বলেছি। নিজের কানে শুনে নিজস্ব ভাবে চাকরি রক্ষার চেষ্টা করুন"।
এরপরেই সকলকে স্কুলে যাওয়ার অনুরোধ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলে যাচ্ছেন, যান। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাইনে পাবেন। যথাযথ জায়গায় মর্যাদার সঙ্গে ফিরে আসার জন্য নিজেদেরটা রক্ষা করুন। সুযোগ আসবে। সদ্ব্যবহার করুন। কোর্টের নির্দেশ না মানলে ২৬ হাজার শিক্ষ বিপদে পড়তে পারেন"।
মমতা জানান, "যাঁদের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে, বলা হয়েছে চাকরির পরীক্ষায় বসতে পারবেন না, তাঁরা অন্য বিভাগে যোগ দিতে পারেন। শিক্ষা বিভাগে লোক প্রয়োজন। ঘর পরিষ্কার, ঘণ্টা বাজানোর লোক নেই। অতিরিক্ত গ্রুপ সি, ডি নিচ্ছি। ওরা শিক্ষা বিভাগে আবেদন করতে পারেন। তবে আলাদা ভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন পোস্ট তৈরি করে নিয়োগ করা যাবে তাঁদের। গ্রুপ-সি , গ্রুপ ডি-রটা আলাদা ভাবে করব"।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন