
* কলকাতা, চেন্নাই, আহমেদাবাদে ওয়াকফ সংশোধনী বিল বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ।
* বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে লোকসভা এবং রাজ্যসভায় এই বিল পাশ করানো হয়েছে।
* সম্প্রতি রাজ্যসভা ও লোকসভায় পাশ হয়েছে ওয়াকফ সংশোধনী বিল।
অবিলম্বে ওয়াকফ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল ২০২৫ প্রত্যাহারের দাবিতে কলকাতার পার্ক সার্কাস ক্রসিং-এ প্রতিবাদে শামিল হল বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু সংগঠন। শুক্রবার বিকেলের এই সমাবেশে বহু মানুষ যোগ দেন। সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে অবিলম্বে লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাশ হওয়া ওয়াকফ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। চলতি সপ্তাহের বুধবার (২ এপ্রিল) ও বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) যথাক্রমে লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাশ হয় এই বিল।
এদিন বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিজেপি এই বিল এনেছে দেশকে বিভক্ত করার জন্য। শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে লোকসভা এবং রাজ্যসভায় এই বিল পাশ করানো হয়েছে। আমরা এই কর্তৃত্ববাদী পদ্ধতির বিরোধিতা করছি। এটি কেবল মুসলিম সম্পত্তি দখলের চেষ্টা নয় বরং আমাদেরও বদনাম করার চেষ্টা।
কলকাতায় বিশাল সংখ্যা মানুষ এদিন জাতীয় পতাকা উড়িয়ে 'ওয়াকফ সংশোধনী বাতিল করো' এবং 'ওয়াকফ বিল বাতিল করো' লেখা ব্যানার সহযোগে সমাবেশে যোগ দেন। জয়েন্ট ফোরাম অফ ওয়াকফ প্রোটেকশন মঞ্চের পক্ষ থেকে এই সমাবেশ ডাকা হয় বলে জানা গেছে।
কলকাতার পাশাপাশি এদিন আহমেদাবাদেও ওয়াকফ সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়। অন্যদিকে চেন্নাইতে বিক্ষোভ দেখায় থালাপতি বিজয়-এর রাজনৈতিক দল তামিলাগা ভেত্রি কাজাঘাম। বিক্ষোভ হয় কোয়েম্বাটোর, তিরুচিরাপল্লীতেও। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ওয়াকফ সংশোধনী বিল বাতিলের দাবি জানানো হয়।
সংসদে বিলটি নিয়ে আলোচনার সময় বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকে তীব্র আপত্তি জানানো হয়। বিরোধীদের পক্ষ থেকে এই বিলকে “মুসলিম বিরোধী” এবং “অসাংবিধানিক” বলে অভিহিত করা হয়। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এটি একটি “ঐতিহাসিক সংস্কার” এবং এই বিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য উপকারী হবে।
গত বুধবার লোকসভায় প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে চলা বিতর্কের পর পাশ হয় ওয়াকফ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল। আলোচনার শেষে ভোটাভুটিতে বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ২৮৮টি এবং বিপক্ষে ২৩২। দীর্ঘ আলোচনার শেষে প্রায় ১ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট ধরে ভোট প্রক্রিয়া চলে। লোকসভায় এই বিল পেশ করেন সংখ্যালঘু বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু।
একইভাবে রাজ্যসভাতেও বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ১২৮ (পক্ষে) ও ৯৫ (বিপক্ষে) ভোটের ব্যবধানে ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল পাস হয়। তবে বিলটি এখনও আইনে পরিণত হয়নি। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু স্বাক্ষর করলেই এই বিল আইনে পরিণত হবে।
লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে আলোচনায় কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ বলেন, এই বিল ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর সরাসরি আক্রমণ। “যা শুধুমাত্র একটি আইনের উপর নয়। এটি সংসদের ভিত্তির উপর আক্রমণ এবং আমাদের সংবিধানের ওপর আক্রমণ।”
এর আগে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি সংসদে ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট পেশের সময়েও আপত্তি জানায় বিরোধীরা। জেপিসির চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করার পরই আপত্তি জানান কংগ্রেস সাংসদ মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি বলেন, ওয়াকফ বিলের একাধিক ধারা নিয়ে বিরোধীরা আপত্তি জানিয়ে 'নোট অফ ডিসেন্ট' দিয়েছিলেন। কিন্তু রিপোর্টে সেগুলি রাখা হয়নি।
যদিও সংসদীয় ও সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু জানিয়েছিলেন, সেরকম কিছুই হয়নি। বিরোধীদের আপত্তিপত্র বা ‘নোট অফ ডিসেন্ট’ পুরোটাই যোগ করা হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন