* বুধবার লোকসভা ওয়াকফ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল পেশ করেন সংখ্যালঘু বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু।
* কিরেণ রিজিজুর দাবির বিরোধিতা করে কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ বলেন, এই বিল ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর সরাসরি আক্রমণ।
* তাঁর আরও অভিযোগ, ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল উপস্থাপনের সময় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু লোকসভাকে "মিথ্যা কথা" বলেছেন এবং "বিভ্রান্ত" করেছেন।
লোকসভায় ওয়াকফ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল বিতর্কে বিজেপিকে কড়া আক্রমণের পথে হাঁটলেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ। বিজেপির এই উদ্যোগকে ‘সংবিধানের ওপর আঘাত’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। বুধবার লোকসভায় ওয়াকফ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল পেশ করেছেন সংখ্যালঘু বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। মন্ত্রীর বক্তব্যের পর এই বিলের বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ।
ওয়াকফ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল পেশ করার সময় কিরেণ রিজিজুর করা দাবির বিরোধিতা করে গগৈ বলেন, এই বিল ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর সরাসরি আক্রমণ। “যা শুধুমাত্র একটি আইনের উপর নয়। এটি সংসদের ভিত্তির উপর আক্রমণ এবং আমাদের সংবিধানের ওপর আক্রমণ।”
তিনি বলেন ক্ষমতাসীন সরকার এই সংশোধনীর মাধ্যমে চারটি প্রধান লক্ষ্য অর্জন করতে চায়। যা চারটি ‘ডি’ দ্বারা সংজ্ঞায়িত: সংবিধানকে দুর্বল করা (Diluting the Constitution), সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবমাননা (Defaming minority communities), সমাজকে বিভক্ত করা (Dividing the society) এবং সংখ্যালঘুদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা (Disenfranchising minorities)।
কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন যে, ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল উপস্থাপনের সময় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু লোকসভাকে "মিথ্যা কথা" বলেছেন এবং "বিভ্রান্ত" করেছেন। এদিন মন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর বিরুদ্ধে সরাসরি ‘বিভ্রান্তিকর বক্তব্য’ পেশের অভিযোগ আনেন কংগ্রেস সাংসদ। তিনি আরও বলেন, ২০২৩ থেকে সংখ্যালঘু বিষয়ক দপ্তর চারটি বৈঠক করলেও কোনও বৈঠকেই এই বিলের বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। অথচ তারপর হঠাৎ করেই এই বিল লোকসভায় পেশ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এক বিজেপি সাংসদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি, যে সাংসদ নিয়মিতভাবে বিরোধী দলের মতামত উপেক্ষা করেন বলে অভিযোগ, তিনি ছয় মাস ধরে একাধিক বৈঠক করেন। অবশেষে ৬৬টি পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়, যার মধ্যে বিরোধীদের ৪৪টি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং বিজেপি এবং মিত্র দলগুলির ২৩টি প্রস্তাব গৃহীত হয়। পরে ফেব্রুয়ারিতে সরকার ২৩টি পরিবর্তনের মধ্যে ১৪টি গ্রহণ করে।
গৌরব গগৈ বলেন, এমনকি বিরোধী সাংসদরা এই বিলের বিষয়ে যে আপত্তি জানিয়েছেন, চূড়ান্ত রিপোর্টে তাও বাদ দেওয়া হয়েছিল। পরে বিরোধী সাংসদদের আপত্তিতে তা যুক্ত করা হয়। আমি অতীতে কখনও এই ধরণের যৌথ সংসদীয় কমিটি দেখিনি, যেখানে প্রতিটি বিধি ধরে আলোচনা হয়নি এবং বিরোধীদের মতামত সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা হয়েছে। যাদের সঙ্গে ওয়াকফ বোর্ডের কোনও সম্পর্ক নেই তাদের বলতে দেওয়া হয়েছে।
ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার দীর্ঘ ইতিহাস এবং বিভিন্ন ধর্মের গ্রহণযোগ্যতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে এদিন লোকসভায় কংগ্রেস উপ দলনেতা বলেন, এই সংশোধনীতে বলা হয়েছে কেবলমাত্র একজন মুসলিম যিনি কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে তার ধর্ম পালন করছেন, তিনিই দান করতে পারবেন। সরকার যখন নিজের কাঁধে ‘ধর্মীয় সার্টিফিকেট’ জারি করার দায়িত্ব নেয়, তখন বুঝতে হবে তা এক দুঃখজনক পরিস্থিতি।
গৌরব গগৈ প্রশ্ন করেন, তারা কি অন্যান্য ধর্মের কাছ থেকেও একই ধরণের বিবৃতি চান? এটা কেমন আইন? বিজেপির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের কতজন মুসলিম সাংসদ আছেন?
তিনি অভিযোগ করেন যে, সরকার এই বিল মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ২০১৩ সালে ইউপিএ সরকারের অধীনে ওয়াকফ আইনে সংশোধনী আনার বিষয়ে কিরেন রিজিজুর মন্তব্য কেবল “মিথ্যা”। “২০১৩ সালের ইউপিএ সরকার সম্পর্কে তিনি যা বলেছিলেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর। আমরা তাকে তার দাবির সত্যতা যাচাই করার জন্য চ্যালেঞ্জ করছি। এই সরকার মিথ্যা অভিযোগ, গুজব ছড়ানো এবং তথ্য বিকৃত করে সাফল্য অর্জন করছে বলেও তিনি জানান।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন