* লোকসভায় ওয়াকফ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল পেশ করলেন সংখ্যালঘু বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু।
* বিরোধীদের পক্ষে জবাবী ভাষণে বলতে উঠেছেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ।
* ওয়াকফ বিলের নাম পরিবর্তন করে ইউনিফাইড ওয়াকফ ম্যানেজমেন্ট এমপাওয়ারমেন্ট, এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (UMEED) বিল রাখা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
* এই বিলের আলোচনা নিয়ে আজ লোকসভা উত্তাল হবার সম্ভাবনা।
লোকসভায় সংখ্যালঘু বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু ওয়াকফ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল পেশ করলেন। বিতর্কিত এই সংশোধনী নিয়ে ইতিমধ্যেই আপত্তি জানিয়েছে দেশের সমস্ত বিরোধী দল। আজ লোকসভা এই বিষয় নিয়ে উত্তাল হতে পারে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বিরোধীদের অভিযোগ, ৪৪টি সংশোধনী এনে ওয়াকফ বোর্ডের ওপর সরকারি কর্তৃত্ব চাপিয়ে দিতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
এদিন লোকসভায় কিরেণ রিজিজু জানান, ওয়াকফ বিলের নাম পরিবর্তন করে ইউনিফাইড ওয়াকফ ম্যানেজমেন্ট এমপাওয়ারমেন্ট, এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (UMEED) বিল রাখা হবে।
কিরেণ রিজিজুর বিল পেশের পর বিরোধীদের পক্ষ থেকে বলতে উঠে কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ দাবি করেন যে, ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের মধ্যে কোনও আলোচনা হয়নি, রিজিজু যে মন্তব্য করেছেন তা বিভ্রান্তিকর।
বুধবার ওয়াকফ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল লোকসভায় পেশ করার আগে ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং বিরোধী কংগ্রেসের পক্ষ থেকে হুইপ জারি করে সব সাংসদকে উপস্থিত থাকবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লোকসভায় এই বিল পাশ হলে পরবর্তীতে তা রাজ্যসভায় পাঠানো হবে। যদিও নিজেদের শক্তিতে এই বিল ক্ষমতাসীন এনডিএ পাশ করাতে পারবেই তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।
এদিন এই বিল পেশ করার সময় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু পূর্বতন ইউপিএ সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, ইউপিএ সরকার সংসদ এবং বিমানবন্দরের জমি ওয়াকফের হাতে দিয়ে দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তা আটকেছেন। যদিও এই বক্তব্যের সময় প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিরোধীরা। রিজিজু বলেন, এই সংস্কার এক ইতিবাচক সংস্কার। যাকে আটকাতে চেষ্টা করছে বিরোধীরা। এই বিল প্রসঙ্গে বিজেপির বক্তব্য, ওয়াকফের নামে এক নির্দিষ্ট গোষ্ঠী সমস্ত সুবিধা ভোগ করছেন। সাধারণ মুসলিমদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। নতুন আইন অনুসারে সাধারণ মুসলিমরা সুফল পাবেন।
লোকসভায় এই বিল নিয়ে ভোটাভুটির প্রয়োজন হতে পারে। তাই সব দলই অঙ্ক কষতে ব্যস্ত। এই মুহূর্তে লোকসভায় বিজেপির সদস্য সংখ্যা ২৪০। টিডিপি এবং জেডিইউ-এর আছে ১৬ এবং ১২ জন সাংসদ। এনডিএ-র অন্যান্য সদস্যদের ধরে সর্বাধিক ২৯৫ সদস্যের সমর্থন পাওয়া সম্ভব। অন্যদিকে কংগ্রেস সহ অন্যান্য সহযোগী দলের সর্বাধিক শক্তি ২৩৪। ফলে সরল হিসেবে বিজেপির পক্ষে ভোটাভুটিতে জয় পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
যদিও বিজেপির প্রধান দুই সহযোগী জেডিইউ এবং টিডিপি-র সমর্থকদের একটা বড়ো অংশই সংখ্যালঘু। এই ক্ষেত্রে তারা বিজেপিকে নিঃশর্ত সমর্থন দিলে তা তাদের সমর্থন ভিত্তিতে ধাক্কা দিতে পারে বলেও মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকে এই বিষয়ে আগেই জেডিইউ এবং টিডিপি-কে সতর্ক করা হয়েছে।
ওয়াকফ বিলের সংশোধনী প্রসঙ্গে কেন্দ্রের দাবি, ওয়াকফ সম্পত্তি আরও ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্যেই এই সংশোধনী জরুরি। যদিও এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস সহ অন্যান্য বিরোধীদের দাবি, তাদের পক্ষ থেকে যৌথ সংসদীয় কমিটির (JPC) কাছে এই বিষয়ে যা যা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তার কোনোটাই মানা হয়নি। তাদের আরও অভিযোগ, সরকার এই সংশোধনী নিয়ে তাড়াহুড়ো করছে।
এর আগে গত বছরের ৮ আগস্ট লোকসভায় ওয়াকফ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল পেশ করা হয়েছিল। সেই সময়েও বিরোধীদের পক্ষ থেকে সম্মিলিতভাবে আপত্তি জানানো হয়েছিল। এরপরে তা যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয় এবং রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়।
যে যে কারণে এই সংশোধনীকে বিতর্কিত বলা হচ্ছে তার মধ্যে অনেকগুলি বিষয় আছে। যেমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল এবং ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্যরা থাকতে পারবেন। এছাড়াও, ওয়াকফ হিসাবে চিহ্নিত সরকারি সম্পত্তি ওয়াকফ হিসেবে থাকবে না এবং কালেক্টর সেগুলির মালিকানা নির্ধারণ করবেন। যা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড।
বোর্ডের পক্ষ থেকে সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলের কাছে এই বিলের পক্ষে ভোট না দেবার আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা আরও জানিয়েছেন, এই বিল শুধু যে বৈষম্য এবং অবিচারের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে তাই নয়, বরং এতে সংবিধানের মৌলিক অধিকারের বিধানগুলিকেও লঙ্ঘন করা হয়েছে।
নতুন বিলে আরও কিছু বিষয়ে বদল আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যেমন এতদিন পর্যন্ত যে কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ হিসেবে ঘোষণার যে অধিকার ওয়াকফ বোর্ডের হাতে ছিল তাতে বদল আনা হবে। প্রস্তাবিল বিল অনুসারে, এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন জেলাশাসক না সমমর্যাদার কোনও আধিকারিক।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন