
এপ্রিল মাসের পয়লা অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকেই দাম বাড়ল অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যাবশ্যকীয় ৯০০ টি ওষুধের দাম। যার মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্যারাসিটামল থেকে শুরু করে কাশি, ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, ক্যান্সার, অ্যানিমিয়া, ঘুমের ওষুধ রয়েছে। পাইকারি বাজারের মূল্যবৃদ্ধির সূচক মেনেই এই সমস্ত ওষুধের এমআরপি-র উপর ১.৭৪ শতাংশ হারে দাম বাড়ানোয় সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে ‘ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি’ (এনপিপিআর)।
গত সপ্তাহের শুক্রবার ২৮ মার্চ ন্যাশনাল লিস্ট অফ এসেনসিয়াল মেডিসিনস (NLEM) ৯০৬টি নির্ধারিত ওষুধের ফর্মুলেশন এবং ১৪টি ইন্ট্রাভেনাস (IV) ফর্মুলেশনের সর্বোচ্চ মূল্য সংশোধনের একাধিক আদেশ জারি করেছে এবং ৮০টি নতুন ওষুধের ফর্মুলেশনের সংশোধিত খুচরা মূল্য সংশোধন করেছে। নতুন হার ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
জাতীয় ওষুধ মূল্য নির্ধারণ কর্তৃপক্ষ ( National Pharmaceutical Pricing Authority -NPPA) পাইকারি মূল্য সূচক (WPI) পরিবর্তনের ভিত্তিতে জাতীয় প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকা (NLEM) তে অন্তর্ভুক্ত ওষুধের দাম ১.৭৪ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা করার পর সর্বোচ্চ মূল্য সংশোধন এবং খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই নিয়ে সম্প্রতি এনপিপিআর নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছে, ২০১৩ -এর কেন্দ্রীয় ড্রাগ প্রাইস কন্ট্রোল অর্ডার (ডিপিসিও) এর ১৬ -এর অনুচ্ছেদ মেনেই ৯০৬ টি ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই বর্ধিত হারে বিক্রি হবে এই সমস্ত ওষুধ। অন্যদিকে, ওষুধের দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রতিবাদ করছে 'বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন' (বিসিডিএ)।
এ প্রসঙ্গে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শঙ্খ রায়চৌধুরী সংবাদমাধ্যমে বলেন, "ভারতে ১০০টা ওষুধের মধ্যে ৮০ শতাংশ ওষুধের দাম সরকার নিয়ন্ত্রণ করে না। সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করে ওষুধের ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলো। বাকি ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার যেখানে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে দাম কমানোর কথা। কিন্তু তা না করে ২০ শতাংশ ওষুধের দাম তারা বাড়িয়ে চলেছে। কেন কেন্দ্র বাকি ৮০ শতাংশের ক্ষেত্রে ম্যানুফাকচারারদের বলবে না যে তোমরা দাম বাড়াতে পারবে না!"
তিনি আরও বলেন, ‘‘ডিপিসিও-র তালিকাভুক্ত ওষুধের দাম বছরে ১০ শতাংশ পর্যন্ত করতে পারে প্রস্তুতকারী সংস্থা। তার উপরে আচমকাই কেন্দ্র আবার ১.৭৪ শতাংশ হারে দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কেন নিল তা বোধগম্য হচ্ছে না"। শঙ্খ রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘যে সব ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে সেগুলি এখন মানুষের জীবনে নিত্য প্রয়োজনীয় হয়ে গিয়েছে। কেন দাম বাড়ানো হল তার যুক্তিসঙ্গত কারণ অবশ্য জানানো হয়নি"।
ওষুধ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ তুলেছেন, সরকার যখন ওষুধের দাম বাড়ায় তখন সাধারণ মানুষের সঙ্গে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংঘাত বাধে। যদিও এতে ওষুধ ব্যবসায়ীদের কোনও হাত থাকে না। এদিকে এই সমস্ত জিনিস মানুষকে বুঝিয়ে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামার আহ্বান জানিয়েছে বিসিডিএ।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই দাম বাড়ানোর তালিকায় অ্যান্টিভাইরাল, রক্তচাপ, বাত, রক্ত তরল করা, কৃমি, জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন, মানসিক সমস্যা, জলাতঙ্কের ইমিউনোগ্লোবিন, ভিটামিন-সি, ম্যালেরিয়া, ক্যানসার, সর্পাঘাত, অ্যান্টিঅ্যালার্জিক, ব্যথানাশক, হৃদরোগ, স্নায়ুরোগ, ছত্রাকজনিত সংক্রমণ, ব্যাকটিরিয়াজনিত সংক্রমণ, গর্ভনিরোধক, যক্ষ্মা, বুকে যন্ত্রণা, জাপানি এনসেফেলাইটিস, অ্যানাস্থিশিয়া, ঘুম, অ্যান্টিবায়োটিক-সহ নির্দিষ্ট কিছু স্টেরয়েডও আছে। তাঁদের কথায়, ‘‘তালিকায় যা দেখা যাচ্ছে, তাতে অত্যাবশ্যকীয় কোনও ওষুধই তো ছাড়া হয়নি। এমন ভাবে আচমকা দাম বৃদ্ধি হলে প্রচুর মানুষ সমস্যায় পড়তে পারেন"।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন