
“আমরাই বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছি!” বাংলা ভাষা নিয়ে বিতর্কের মাঝে শুক্রবার দমদমের সভা থেকে এমনই জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এমনকি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলকে নিশানা করে তিনি বলেন, “তৃণমূল উন্নয়নের শত্রু! ওরাই বাংলায় উন্নয়ন হতে দিচ্ছে না”। অনুপ্রবেশকারী প্রসঙ্গেও এদিন তৃণমূলকে নিশানা করেন মোদী।
শুক্রবার কলকাতায় আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন শহরের তিনটি মেট্রো প্রকল্প উদ্বোধনের পর দমদম সেন্ট্রাল জেল ময়দানে ভাষণ দেন তিনি। প্রথমেই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলকে নিশানা করে তিনি বলেন, “বাংলার জন্য যে টাকা আমরা সরাসরি রাজ্য সরকারকে পাঠাই, তার বেশির ভাগ লুট হয়ে যায়। আপনাদের জন্য খরচ হয় না। টিএমসি ক্যাডারের জন্য খরচ হয়। এই জন্য জনকল্যাণে পিছিয়ে পড়ছে পশ্চিমবঙ্গ। আগে ত্রিপুরা, অসমে এই হাল ছিল। যবে থেকে বিজেপি সরকার এসেছে গরিব কল্যাণ যোজনার লাভ ওই দুই রাজ্য পাচ্ছে।’’
মোদী বলেন, তৃণমূলের জন্যই বাংলায় উন্নয়ন আটকে আছে। শাসক দলকে নিশানা করে তিনি বলেন, “প্রথমে কংগ্রেস, তার পর বামেদের শাসন দেখেছে বাংলা। ১৫ বছর আগে আপনারা মা-মাটি-মানুষে বিশ্বাস করে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে আগের চেয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হল। ‘ক্রাইম’ এবং ‘কোরাপশন’ টিএমসি সরকারের পরিচিতি। এটা পাকা যে, যত দিন বাংলায় তৃণমূলের সরকার থাকবে, তত দিন বাংলায় উন্নয়ন থমকে থাকবে। তৃণমূল গেলে তবেই আসল পরিবর্তন আসবে।’’
এরপরেই বাংলায় নতুন স্লোগানের আহ্বান দেন মোদী - ‘‘পরিবর্তন, যা মেয়েদের সুরক্ষা দেবে, যা দোকান আর ঘরে আগুন লাগানো বন্ধ করবে, গরিবের অধিকার গরিবকে পাইয়ে দেবে, কৃষকের উন্নতি হবে,’’ স্লোগান তোলেন তিনি। স্লোগান দেন, ‘বাঁচতে চাই, তাই বিজেপি চাই!’
মোদীর দাবি, বাংলায় বিজেপির সরকার এলে, শ্যামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের স্বপ্নের বাংলা বানিয়ে দেবেন তিনি। তিনি বলেন, "বিকশিত বাংলা, মোদীর গ্যারান্টি। বাংলার উন্নয়নের জন্য বিজেপির কাছে রোডম্যাপ আছে। কিন্তু তৃণমূলের নেই। তৃণমূল উন্নয়নের শত্রু। তার সাক্ষী এই দমদমের মানুষও। স্মার্ট সিটি মিশনে এখানকার অনেক উন্নতি হতে পারত। কিন্তু তৃণমূলের সরকার সেই প্রকল্পে যুক্ত হল না। তৃণমূলের কাজ হল, যে কোনও উপায়ে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের রূপায়ণ আটকানো। তাই আপনারা এখানে বিজেপিকে একবার সুযোগ দিয়ে দেখুন।’’
ভাষা বিতর্কের আবহে মোদী বলেন, ‘‘বিজেপি সরকার সগর্বে বাংলা ভাষা আর বাংলা সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করছে। আমরাই বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছি।’’
অনুপ্রবেশকারী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এখান থেকে অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াতে হবে কি না? কে তাড়াবে? বিজেপি তাড়াবে। বিজেপিকে জেতান। বিজেপিকে ভোট দিন। অনুপ্রবেশকারীরা বাংলা ছেড়ে পালাবে। ভারতের কাছে সম্পদ কম। যুব সমাজকে উপার্জন দিতে হবে, নাগরিকদের সুবিধা দিতে হবে। অনুপ্রবেশকারীরা রোজগার কেড়ে নিচ্ছে। নাগরিকদের অধিকারে ভাগ বসাচ্ছে। মা-বোনেদের সম্মানে হাত দিচ্ছে। তৃণমূল অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। ভোটব্যাঙ্কের জন্য প্রশ্রয় দিচ্ছে। জমি কেলেঙ্কারি হচ্ছে। কৃষকের জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, আদিবাসীদের জমি দখল করা হচ্ছে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি লালকেল্লার প্রাচীর থেকেও বলেছি, অনুপ্রবেশকারীদের যেতেই হবে। যারা নকল কাগজপত্র নিয়ে এখানে আছে, তাদের এখান থেকে যেতেই হবে। এই ভাবে তৃণমূল সরকারকেও এখান থেকে বিদায় নিতে হবে।’’
এদিন দমদমের সভায় দাঁড়িয়ে দুর্নীতি প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগ মামলায় গ্রেফতারির পরেও পদ ছাড়তে চাননি। তৃণমূলের আরও এক মন্ত্রী রেশন দুর্নীতিতে গ্রেফতার হয়েছেন। তিনিও মন্ত্রিত্ব ছাড়তে চাননি। মানুষের ভাবনা নেই এঁদের। এঁরা জনতাকে ধোঁকা দিয়েছেন। এঁদের সরকারি পদে থাকার অধিকার আছে?’’
কেজরীওয়ালের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘এটাও দেখলাম, দুর্নীতি করে জেলে গিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর কাজ করছেন! সংবিধানের এই অপমান মোদী মানবেন না। দুর্নীতি করলে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিও থাকবে না। কিন্তু তৃণমূল এই আইনের বিরোধিতা করছে। সংসদে বিলের বিরোধিতা করছে।’’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন