
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য। সম্মুখ সমরে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল এবং বিরোধী বামেরা। ইতিমধ্যেই শনিবারের ঘটনার জেরে সোমবার ৩ মার্চ রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে এসএফআই। অন্যদিকে যাদবপুরের ঘটনার পর রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গায় সিপিআইএম অফিস ভাঙচুর করেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বলে অভিযোগ। গতকাল রাতেই যাদবপুরের ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন জায়গায় মিছিল ও থানা ঘেরাও করে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে সিপিআইএম সহ অন্যান্য বাম দল। একইভাবে পাল্টা মিছিল করে তৃণমূলও।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবারের ঘটনা প্রসঙ্গে এসএফআই জানিয়েছে, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের ওপর তৃণমূলের শিক্ষামন্ত্রীর জঘন্য আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করেন। যা অনেকটা বিজেপি'র কায়দায় গাড়ি চালিয়ে খুনের চেষ্টা।” প্রায় একই সুরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। গতকাল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “কৃষক বিক্ষোভে বিজেপি নেতার গাড়ি চাপা দিয়ে কৃষক হত্যার ঘটনা মনে করিয়ে দিল আজ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত ছাত্রদের ওপর টিএমসি মন্ত্রীর গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য ঘটনা।”
সেলিম আরও বলেন, ‘‘কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। কেন হয় না? এসএফআই-কে কলেজ কলেজে ঢুকতে দেওয়া হয় না। শিক্ষামন্ত্রী কী করেন তখন?... এই বাবুল সুপ্রিম এখন তৃণমূলের নেতা। আগে বিজেপি-তে ছিলেন। তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে নাটক করেননি?’’
যাদবপুরের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও। গতকাল এক এক্স বার্তায় (পূর্বতন ট্যুইটার) তিনি বলেন, "উত্তর প্রদেশের মোদি-ভক্ত বিজেপি নেতা শেষমেশ ব্রাত্য বসুদের পথ প্রদর্শক!! গাড়ি চালিয়ে কৃষক খুনের পথেই এবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ছাত্র খুনের চেষ্টা! ভাবা যায়? মন্ত্রী না ক্রিমিনাল!! বিক্ষোভরত ছাত্রদের উপর গাড়ি চালিয়ে দেওয়া মন্ত্রীকে গ্রেফতার এবং শাস্তি দিতে হবে।"
যাদবপুরের ঘটনা প্রসঙ্গে এসএফআই রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী ঠান্ডা মাথার ক্রিমিনাল। পরিকল্পনামাফিক অশান্তি পাকালেন, তারপর খুনের চেষ্টা করলেন ছাত্রছাত্রীদের। বেরিয়ে গিয়ে সরকারি হাসপাতালের ঘেরাটোপে ফলস্ রিপোর্ট বানালেন নিজের।”
শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপেন এয়ার থিয়েটারে ছিল তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপার বৈঠক। সেই বৈঠকে যোগ দিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন ব্রাত্য বসু। এদিকে এদিন বৈঠক শুরুর আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ছিল উত্তেজনাময় পরিস্থিতি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ ভোটের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন এসএফআই, আইসা, ডিএসএফ (ডেমোক্র্যাটিক স্টুডেন্টস ফ্রন্ট) –এর সদস্যরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট আটকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন তাঁরা।
যার ফলে বৈঠকে যোগ দিতে এসে বিক্ষোভের মুখে পড়েন ব্রাত্য বসু। তাঁকে কোনওরকমে ৩ নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করিয়ে ওপেন এয়ার থিয়েটারের পিছন দিয়ে মঞ্চে তোলা হয়। কিন্তু বৈঠক শেষে বেরিয়ে ফের আন্দোলনরত পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। অভিযোগ, তাঁর গাড়ির কাচ ভেঙে দেওয়া হয়েছে, গাড়ির ওপরে লিখে দেওয়া হয়েছে ‘চোর ব্রাত্য’। এছাড়া গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয়। শিক্ষামন্ত্রীকে ঘিরে ‘চোর-চোর’, ‘গো-ব্যাক' স্লোগান ওঠে। এমনকি গাড়ির উপর জুতো ছোঁড়া হয় বলেও অভিযোগ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন