BGBS 2025: দ্বিতীয় দিনে ৪,৪৪,৫৯৫ কোটির বিনিয়োগ-প্রস্তাব, স্বাক্ষর ২১২ টি মউ, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী

People's Reporter: মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "আম্বানি বা জিন্দল বাংলার জন্য ব্যক্তিগতভাবে আরও কিছু বিনিয়োগ করবে। শুধু মুকেশজিই বাংলায় এক লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবেন"।
সমাপ্তির দিনে বিজিবিএস
সমাপ্তির দিনে বিজিবিএসছবি - মুখ্যমন্ত্রীর ফেসবুক পেজ
Published on

বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের প্রথম দিনেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য বাংলায় কর্মসংস্থান করতে হবে। আর বিজিবিএস–এর দ্বিতীয় দিন তথা সমাপ্তি ভাষণে মমতা জানালেন, বুধবার বিনিয়োগের যে প্রস্তাব এসেছিল তা ধরা হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার যে বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে, সেটা অভূতপূর্ব।

বাণিজ্য সম্মেলনের প্রথম দিন বাংলায় বড় বড় অঙ্কের বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুকেশ আম্বানি, সজ্জন জিন্দল, সঞ্জীব পুরীরা। বিজিবিএস-এর শেষ দিনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি জানি সকলেই একটা কথা জানার অপেক্ষায় রয়েছেন। তা হল, কত কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এল”। এরপরেই তিনি বলেন, “শুধু আজকেই (বৃহস্পতিবার) ৪ লক্ষ ৪৪ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকার লগ্নি প্রস্তাব এসেছে”।

মমতা জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে ২১২ টি মউ (মেমোরেন্ডাম অফ আন্দারস্ট্যান্ডিং) স্বাক্ষরিত হয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, আনুষ্ঠানিকভাবে আম্বানি বা জিন্দল বাংলার জন্য যা ঘোষণা করেছেন, তা রয়েছেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে দুই শিল্পপতি জানিয়েছেন, তাঁদের দুই গোষ্ঠী আরও কিছু বিনিয়োগ করবে। মমতার দাবি, “শুধু মুকেশজিই বাংলায় এক লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবেন”।

বুধবার অষ্টম বিজিবিএস উদ্বোধনের আগে সরকারকে নিশানা করেছিল বিরোধী দলগুলো। তাদের দাবি ছিল, প্রতি বছর বাণিজ্য সম্মেলনে বিনিয়োগ নিয়ে ‘গালভরা কথা’ শোনা যায়। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায় না। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তাদের জবাব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবারও এই নিয়ে মুখ খুলে তিনি বলেন, ‘‘সকলেই মানছেন বাংলা বদলে গিয়েছে। সকলেই মানছেন প্রতি বছর কলেবরে বাড়ছে বিজিবিএস। তাই এখন শুধু দেশের শিল্পপতিরাই নন, ২০টি অন্য দেশ আমাদের সহযোগী হয়েছে”।

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার বাণিজ্য সম্মেলনের শেষ দিনে প্রথমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। দুই ধাপে আলোচনা হয়। প্রথম ধাপ - ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির নিজেদের মধ্যে (বি-টু-বি) এবং অন্যটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে সরকারের (বি-টু-জি)। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা বাংলা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা আগেই উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় পরিসংখ্যান দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘বাংলায় এমএসএমই সেক্টরে ১ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ কর্মরত। এই সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে”।

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার এমএসএমই নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে, তা তুলে ধরেন শিল্পপতিরা। তাঁদের বক্তব্য –

মেহুল মোহানকাঃ শিল্পপতি মেহুল মোহানকা জানিয়েছেন ন্যাপকিন, ডাস্টার, সুতি-সহ অন্যান্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের একাধিক প্রস্তাব এসেছে। তাঁর কথায়, ‘‘তিনটি শিল্পতালুক গড়ে উঠবে জলপাইগুড়িতে। যা উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ছাপ ফেলবে। এই ক্ষেত্রে মোট ১৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। কর্মসংস্থান হবে প্রায় ১৫ হাজার”।

হর্ষবর্ধন নেওটিয়াঃ শিল্প মানচিত্রে বাংলার গতি সম্পর্কে উল্লেখ করে হর্ষবর্ধন বলেন, ‘‘বাংলা বদলাচ্ছে বলেই বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে। নতুন নতুন সংস্থা হোটেল শিল্পে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। ১০-১১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। যা উল্লেখযোগ্য”।

গৌতম ঘোষঃ বাংলার প্রাকৃতিক বৈচিত্র এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা দেশ-বিদেশের বণিক মহলে তুলে ধরার কথা জানান চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় পাহাড়, সমুদ্র, সুন্দরবনের মতো প্রাকৃতিক প্রাচুর্য রয়েছে। বিদেশের সিনেমাশিল্পকে এখানে আকর্ষিত করার কাজ আমরা চালিয়ে যাব”।

শেষ দিনের বাণিজ্য সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা তথা তৃণমূল সাংসদ দেব এবং অভিনেত্রী রুক্মিণী মৈত্র। বুধবারের মতো বৃহস্পতিবারও গোটা অনুষ্ঠানের পরিচালনের দায়িত্বে ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তবে বুধবার মঞ্চে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা-সহ কোনও মন্ত্রীকে দেখা না গেলেও, বৃহস্পতিবার শশী-সহ অনেককেই দেখা গেছে মঞ্চে। যাঁর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য বাবুল সুপ্রিয়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস।

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার সমাপ্তি অনুষ্ঠান থেকেই আগামী বছরের বিজিবিএস-এর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরে এপ্রিল-মে মাসে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে বাংলায় আর একটা বিজিবিএস-এর বৈঠক বসার সম্ভাবনা রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, ছাব্বিশের নির্বাচন সেই সম্মেলনে বিনিয়োগের প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করেই হতে পারে।

সমাপ্তির দিনে বিজিবিএস
মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পরের দিনই কাজ শুরু দেউচা-পাঁচামিতে! সরকারি চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ জমিদাতাদের
সমাপ্তির দিনে বিজিবিএস
BGBS 2025: নতুন বিনিয়োগ কিসে? বাকি রিপোর্টই বা কেমন? এক নজরে বাণিজ্য সম্মেলনের প্রথম দিন

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in