
যন্ত্রপাতি, সাজসরঞ্জামের ঘাটতি, নেই পর্যাপ্ত অধ্যাপক, যন্ত্রাংশে মরচে পড়ে গিয়েছে, লোকবলও কম ইত্যাদি একাধিক কারণে কলকাতার আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজে বিডিএসের আসন সংখ্যা হ্রাসের সুপারিশ করেছে ডেন্টাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (ডিসিআই)। আগামী শিক্ষা বর্ষ থেকেই আসন সংংখ্যা কমানোর সুপারিশ করেছে ডিসিআই। ১২৫টি আসনের বদলে মাত্র ৬৩টিতে দন্ত চিকিৎসা শিক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা যাবে বলে জানিয়েছে ডিসিআই।
সম্প্রতি এশিয়ার সব চেয়ে পুরনো এবং এ রাজ্যের বৃহত্তম আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজে পরিদরশনে আসে ডেন্টাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া। পরিদর্শনের পর কলেজের পরিকাঠামোগত সমস্যা নিয়ে একটি লম্বা রিপোর্ট দিয়েছে ডিসিআই। মোট ১৯ দফা খামতির কথা জানা হয়েছে সেই রিপোর্টে। বলা হয়েছে, অর্ধেক যন্ত্রাংশই নেই ওই মেডিক্যাল কলেজে। থাকলেও সে সব আলমারিতে বন্দি। পড়ুয়ারা তা ব্যবহার করতে পারছেন না। কলেজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর অভাব। স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা কম। ইঞ্জিনিয়ারিং কর্মীর সংখ্যা কম। পর্যাপ্ত বই নেই। ডেন্টাল চেয়ারগুলি জং ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। কোনও কোনও যন্ত্রে মরচেও পড়ে গিয়েছে। ওপিডিতে রোগী বা স্পেশাল কেস সংক্রান্ত কোনও রেকর্ড নেই বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
পাশাপাশি কলেজের নিজস্ব প্রেক্ষাগৃহ না-থাকা, হস্টেলের সমস্যা, বিভিন্ন ল্যাবের দুর্দশা এবং সার্বিক পরিচ্ছন্নতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ডিসিআই।
পরিকাঠামোর অবস্থা বিবেচনা করে অবিলম্বে আসন সংখ্যা কমানোর কথা বলা হয়েছে কাউন্সিলের তরফে। শুধু বিডিএস কোর্সের ক্ষেত্রে নয়, স্নাতকোত্তর স্তরেও ২৫ শতাংশ (এমডিএস কোর্স) আসন সংখ্য়া কমানোর কথা বলা হয়েছে।
তিন বছর আগে শতবর্ষ পালনকারী ঐতিহ্যবাহী কলেজ পরিদর্শনের পর বৈঠকে বসে দেশের দন্ত চিকিৎসা শিক্ষার নিয়ামক সংস্থা ডিসিআই। সেখানেই আসন সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবং সেই অনুযায়ী সুপারিশও করা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে। পরিকাঠামোর অভাবেই পড়ুয়া ভর্তিতে রাশ টানা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডিসিআই।
আচমকা এমন ঘটনায় অস্বস্তি বেড়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের। ওই ডেন্টাল কলেজে আট বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ সামলানো তপনকুমার গিরি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। মুখে কুলুপ স্বাস্থ্য দফতরেরও। তবে এ বছরের মতো অন্তত বিডিএসে ১২৫ জন এবং স্নাতকোত্তর এমডিএসে ২৮ জন পড়ুয়াকেই ভর্তি করা যায়, সেই চেষ্টা করছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর। শুক্রবার দফায় দফায় বৈঠক করেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা বিভাগের কর্তারা। স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের দাবি, ডিসিআই আসন কমানোর সুপারিশ করলেও ছাত্র ভর্তি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাই এবছর যাতে আসন সংখ্যা না কমে, তার চেষ্টা করা হচ্ছে।
১৯২০ সালে ডঃ রফিউদ্দিন আহমেদের স্থাপন করা কলেজে পরিকাঠামোর অভাবে আসন সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার সুপারিশ লজ্জার বলে মানছেন অধিকাংশ স্বাস্থ্যকর্তারা।
GOOGLE NEWS-এ আমাদের ফলো করুন