CPIM: রাজ্যে এখন লুটেরাদের রাজত্ব চলছে - মহম্মদ সেলিম

People's Reporter: রাজ্যে এখন লুটেরাদের রাজত্ব চলছে। তা সে চাকরি হোক, মা বোনদের সম্ভ্রম হোক, সম্পদ হোক, জমি যাই হোক না কেন। বৃহস্পতিবার CPIM রাজ্য অফিসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেন মহম্মদ সেলিম।
আলিমুদ্দিন স্ট্রীটে সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম
আলিমুদ্দিন স্ট্রীটে সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম নিজস্ব চিত্র
Published on
Summary

এদিন সেলিম বলেন, রাজ্যে এখন লুটেরাদের রাজত্ব চলছে।

সেলিম বলেন, শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য সাংবিধানিক দিক থেকে অপরাধ।

সেলিম বলেন, আমরা গোটা রাজ্যের সব থানায় শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে এফআইআর করব।

সেলিম বলেন, তৃণমূল এই রাজ্যে আরএসএস-এর প্রোজেক্টের বাস্তবায়ন করছে।

আজ পার্ক স্ট্রীট কান্ডের নির্যাতিতার মৃত্যু দিন। তাঁকে আমরা স্মরণ করছি। এর পরেও একাধিক এই ধরণের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোনও ঘটনাতেই কেউ শাস্তি পায়নি। কারণ অন্যায়ের প্রশ্রয়দাত্রী যদি মুখ্যমন্ত্রী হন তাহলে এরকমই হয়। রাজ্যে এখন লুটেরাদের রাজত্ব চলছে। তা সে চাকরি হোক, মা বোনদের সম্ভ্রম হোক, সম্পদ হোক, জমি যাই হোক না কেন।  বৃহস্পতিবার সিপিআইএম রাজ্য অফিসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেন দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।

রাজ্যের বিরোধী দলনেতার সাম্প্রতিক মন্তব্য প্রসঙ্গে এদিন তিনি বলেন, শুভেন্দু অধিকারীর কথা সাংবিধানিক দিক থেকে অপরাধ। প্রশাসনিক দিক থেকে অপরাধ। এছাড়াও এটা হেট স্পিচের আওতায় পড়ে। তিনি মানুষে মানুষে ঘৃণা তৈরি করছেন। বিধানসভায় কে থাকবে না থাকবে সেটা তো আইনসভার দেখার বিষয়? উনি কে কাউকে সেখান থেকে বের করে দেবার। এগুলো যা হচ্ছে তাঁর সবটা হচ্ছে আরএসএস-এর হিন্দুত্ব প্রোজেক্টের অংশ।

শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিজেপির কেউ বলেননি এটা অন্যায়? কেন পুলিশ আইনত কোনও ব্যবস্থা নিল না। যখন এটা হেট স্পিচের আওতায় পড়ে। যেখানে প্রকাশ্যে উসকানি দেওয়া হচ্ছে, উত্তেজনা তৈরি করা হচ্ছে তখন পুলিশমন্ত্রী, পুলিশ কেন নীরব? যারা ছিঃ ছিঃ করেছিল তারা কেন বলছেনা যে এটা বাংলার সংস্কৃতি নয়? আমরা গোটা রাজ্যের সব থানায় শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে এফআইআর করব। দেখি পুলিশ কী ব্যবস্থা নেয়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের রাজ্যে আইনসভায় মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব ক্রমাগত কমছে। মুখ্যমন্ত্রী গতকাল ডান্ডিয়া, ভাঙরা নাচলেন। আইন কানুন সব সর্বনেশে করে দিয়ে। অথচ এখন মূল ইস্যু হওয়া উচিত বেকাররা কাজ পাচ্ছে না, রাজ্যের ঋণ ক্রমশ বাড়ছে, আলু চাষি ফসলের দাম পাচ্ছে না। তখন বিধানসভায় দাঁড়িয়ে কী ধর্ম নিয়ে আলোচনা হবে?

এদিন মহম্মদ সেলিম বলেন, আসলে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে মানুষ যখন ন্যায়ের দাবিতে একজোট হচ্ছে, মানুষ যখন রুটি রুজির দাবিতে সরব হচ্ছে তখন মোহন ভাগবতের নির্দেশে এঁরা মানুষে মানুষে বিভাজন চাইছে। আমাদের দেখতে হবে দাঙ্গাবাজরা যেন কোনও জায়গা না পায়। সব জায়গায় আতঙ্ক তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মহারাষ্ট্র যখন সবথেকে বেশি ঋণগ্রস্ত তখন ঔরংজেব নিয়ে চিৎকার করা হচ্ছে।

দোল প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, দোল সম্প্রীতির উৎসব। সারা দেশ জুড়ে পালন করা হয়। এটা বসন্ত উৎসব। সেই উৎসব নিয়ে ধর্মীয় জিগির তৈরি করা হচ্ছে কারণ এর একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য আছে। দেশে রাজ্যে যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ছিল তা নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রীতির বাতাবরণকে নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। আমরা বামফ্রন্টের তরফ থেকে সতর্ক থাকার আবেদন জানিয়েছি। এখন যেহেতু দোল, রমজান, রামনবমী সব পরপর আছে তাই এভাবে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের রাজ্যে দাঙ্গাপ্রবণ এলাকায় বামপন্থীদের সজাগ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও প্ররোচনা, গুজবে পা না দেবার আবেদন জানাচ্ছি।

এদিন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক বলেন, আমরা চেয়েছিলাম শুভেন্দু এখন বারবার অভিষেক অভিষেক বলুক। শুভেন্দু বলুক কে চাকরি দুর্নীতির টাকা নিয়েছে, কীভাবে দুর্নীতির টাকা পাচার হয়েছে তা নিয়ে, অথচ সেসব কোনও কথা নেই। আরজি কর কান্ডের পর থেকে আমরা দেখছি আমরা যখন রাজ্যের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হচ্ছি তখন বিজেপি সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে সরব হচ্ছে। এসব ভুলিয়ে দেবার জন্যেই পরিকল্পিত ভাবে এসব করা হচ্ছে। তৃণমূলকে রক্ষা করছে বিজেপি আর বিজেপিকে রক্ষা করছে তৃণমূল। তৃণমূল এই রাজ্যে আরএসএস-এর প্রোজেক্টের বাস্তবায়ন করছে। তাই পুলিশ সব জায়গায় চুপ করে থাকছে। শুভেন্দু গত দু সপ্তাহ ধরে তৃণমূল মমতা সম্পর্কে কিছু বলছে না। শুধু সিপিএম আর মুসলমান বলছে। যাদবপুরে মন্ত্রী গাড়ি চাপা দিল ছাত্রকে। সেখানে শুভেন্দুর ভূমিকা কী? বাবুল সুপ্রিয় যেমন বিজেপি থেকে তৃণমূলে গেছে শুভেন্দুও সেই পথে হাঁটছে।

রাজ্যের ভূতুড়ে ভোটার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গত এক দশক আগে থেকে সিপিএম বলছে ভুতুড়ে ভোটারের কথা। ২০২২ সালে নির্বাচন কমিশনের কাছে ভুয়ো ভোটারের তালিকা দিয়েছিল সিপিএম। এটা এমন নয় যে ২৬ সালে এটা হবে। তৃণমূল কী এখন জানলো? ২০১৯ এর নির্বাচনের পর আমি আসন ধরে ধরে বলেছিলাম কারচুপি হয়েছে। ভোটে কারচুপিতে, ভোটের দুর্নীতিতে, গণনায় তৃণমূল বিজেপি দুজনেই লাভ করেছে। মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানা ভোটের কারচুপি নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠেছে তখন মমতা ব্যানার্জি এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এটা আরএসএস-এর পরিকল্পনা। মহারাষ্ট্র হরিয়ানা ঢাকতে এটা সামনে আনা হচ্ছে। ভোটে কারচুপিতে এই দুদলই লাভবান হয়েছে।

রাজ্যের পাচার চক্রের প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পুলিশ সব ব্যাপারে পাচারকারীদের অংশীদার। কোনও রাজ্যে এভাবে পাচারচক্র এত বিস্তার লাভ করতে পারেনা যদি না প্রশাসন তার সঙ্গী হয়।

এদিন আরএসএসকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, আরএসএস বিজেপির প্রোজেক্ট এই রাজ্যে তৃণমূল ইমপ্লিমেন্ট করছে। চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মভূমিতে এই জিনিস হচ্ছে। যিনি সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলেছেন। এই নবদ্বীপেই এর আগে নজরুলের ছবি নিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। এই পূর্ব বর্ধমানে কিছু মানুষকে মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তৃণমূল বিজেপি ইতিহাসের চাকা উল্টোদিকে ঘোরাতে চাইছে।

চিটফান্ড প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মমতা ব্যানার্জি চিটফান্ডের অনেকগুলো অ্যাম্বুলেন্স উদ্বোধন করেছিলেন। সেগুলো কোথায় গেল? উবে গেল? খবর নিলে দেখা যাবে সব তৃণমূলের ভাঁড়ারে ঢুকেছে। ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজ এবং সমাজের সব অংশকে নিয়ে আন্দোলন হবে।

রাজ্যের ক্রীড়া প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, মমতা ব্যানার্জি আর তার পরিবার সমস্ত ক্রীড়া সংগঠনগুলো দখল করেছে। এখন কোন খেলায় বাংলার প্রতিনিধিত্ব থাকে? খেলোয়াড় কোথায় উঠছে? এতদিন উনি কেন পানিহাটি নিয়ে চুপ ছিলেন?

রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, এই সরকারের কাছে শিক্ষার জন্য কোনও টাকা নেই। কারণ এই সরকার মনে করে শিক্ষার জন্য কোনও টাকা নেই। আর কেন্দ্রীয় সরকারও তাই মনে করে। দুজনের উদ্দেশ্য এক। যাতে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়। সরকার পোষিত শিক্ষাব্যবস্থা তুলে দেবার চেষ্টা চলছে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ শিক্ষিত না হতে পারে তাই কেন্দ্র ও রাজ্য একযোগে চেষ্টা চালাচ্ছে।

আলিমুদ্দিন স্ট্রীটে সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম
JU: যাদবপুরের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য, শিক্ষামন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে রাস্তায় CPIM
আলিমুদ্দিন স্ট্রীটে সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম
CPIM: পুনরায় CPIM রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, ৮০ জনের রাজ্য কমিটিতে নেই সুশান্ত ঘোষ, বাদ আরও অনেকে

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in