
অন্য রাজ্যে কাজে গিয়ে আক্রান্ত হতে হচ্ছে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের। এমনকি বাংলায় কথা বললে ‘বাংলাদেশী’ তকমা দেওয়া হচ্ছে। কাউকে কাউকে আবার জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়াও হচ্ছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এই নিয়ে একাধিকবার সরব হয়েছেন। এবার বাঙালি হেনস্থায় কেন্দ্রের কাছে জবাব তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট।
বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে অভিযোগ করা হয়, দিল্লিতে পশ্চিমবঙ্গের কিছু বাসিন্দাকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, আবেদনকারীরা দাবি করেছেন তারা ইতিমধ্যে নির্বাসিত হয়েছেন এবং দিল্লি হাইকোর্টে বিষয়টি বিচারাধীন।
কেন্দ্রের পক্ষে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোক কুমার চক্রবর্তী জানান, দিল্লি হাইকোর্টে ইতিমধ্যেই একটি আবেদন দাখিল করা হয়েছে এবং আবেদনকারীরা সেখানে বিদেশি নাগরিকদের নিবন্ধন দফতরের (FRRO) নির্বাসন আদেশকে চ্যালেঞ্জ করেছেন।
অশোক কুমার চক্রবর্তীর অভিযোগ, এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করার সময় দিল্লি হাইকোর্টে দায়ের হওয়া মামলার তথ্য গোপন রাখা হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট এই গোপনীয়তার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে কেন্দ্রকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে হলফনামা সহ সব রেকর্ড জমা করার নির্দেশ দিয়েছে।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইনজীবী জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাভাষীদের জাতীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদন্তের দাবি উঠেছে। আদালত এই বিষয়ে মৌখিকভাবে কেন্দ্রের আইনজীবীর কাছে জানতে চাইলেও, কোনও লিখিত আদেশ জারি করেনি।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাঙালিদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করছে সিপিআইএম, কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস। মঙ্গলবার যাদবপুরে ৮ বি বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রতিবাদ মিছিল করে সিপিআইএম। সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, 'গত কয়েক বছর ধরে, আসাম, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, ওড়িশা, দিল্লি, হরিয়ানা, গুজরাটে ঘৃণার চাষ করা হয়েছে। আরএসএস এর সাথে যুক্ত আছে। আমরা বামপন্থীরা প্রথম থেকেই এই কথা বলে আসছি। বাঙালিদের বাইরের রাজ্যে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে।'
বুধবার তৃণমূলের তরফ থেকেও প্রতিবাদ মিছিল করা হয়। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি, তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা ব্যানার্জি বলেন, “বীনা যুদ্ধে আমরা এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বো না। আমরা প্রত্যেক ভাষাভাষীর মানুষদের সম্মান করি। কিন্তু আপনারা কেন বাঙালিদের উপর অত্যাচার করছেন? সমস্ত নথি দেখানোর পরেও তাঁদেরকে আপনারা জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। আমাদের রাজ্যেও কিন্তু ১.৫ কোটি পরিযায়ী শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের সাথে আমরা কখনও এমন ব্যবহার করিনি। আমরা সম্মান দিই আর আপনারা সম্মানহানি করেন”।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন