
কলকাতা থেকে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI)-র একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দফতর সরানোর পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ। এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে 'ব্যাঙ্ক বাঁচাও দেশ বাঁচাও মঞ্চ' (BBDBM) নামক নাগরিক সংগঠন। এই বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির হস্তক্ষেপ দাবি করে তাঁকে চিঠি লিখেছে সংগঠন, যাতে SBI-র দফতরগুলি সরানোর পরিকল্পনা অবিলম্বে বন্ধ করা হয়।
মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক বিশ্বরঞ্জন রায় এবং সৌম্য দত্ত। সংগঠনটি এই পদক্ষেপকে অবৈধ ও একতরফা বলে দাবি করেছে। এর ফলে রাজ্যের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
বিবিডিবিএম-এর পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে জানানো হয়েছে, এসবিআই তাদের গ্লোবাল মার্কেট ইউনিট (GMU), সেন্ট্রাল গ্লোবাল ব্যাক অফিস (CGBO) এবং তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় প্রসেসিং সেল - লায়াবিলিটি সেন্ট্রাল প্রসেসিং সেল (LCPC), সেন্ট্রালাইজড চেক প্রসেসিং সেল (CCPC) এবং সেন্ট্রালাইজড পেনশন প্রসেসিং সেল (CPPC) - কলকাতা থেকে অন্যত্র সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই সব ইউনিটগুলি শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সিকিম এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকেও পরিষেবা দিয়ে থাকে।
পাশাপাশি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগও করেছে সংগঠনটি। BBDBM জানায়, ২০০৮ সালের ১৩ মার্চ এসবিআই কর্তৃপক্ষ ও কর্মী সংগঠনের সঙ্গে করা একটি চুক্তি অনুযায়ী, এসবিআই-এর ফরেক্স ট্রেজারি ইউনিট কলকাতা থেকেই পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল। এছাড়াও, ২০০০ সালের আরেকটি চুক্তি অনুযায়ী ৫০% বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের কাজ কলকাতা থেকে করা বাধ্যতামূলক ছিল, যা এখনও কার্যকর হয়নি।
কলকাতাকে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে তৎকালীন চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্য-এর উদ্যোগে GMU কলকাতার ভিতরে CGBO গঠন করা হয়।
BBDBM আরও জানায়, এই ইউনিটগুলি সরানো হলে প্রায় ৬০০ পরিবারের জীবিকা বিপন্ন হবে, যার মধ্যে অন্তত ১৫০ স্থায়ী কর্মী এবং ২০০-র বেশি অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন। এর ফলে রাজ্য সরকারের প্রায় ২৫ কোটি টাকার বার্ষিক জিএসটি রাজস্ব ক্ষতি হবে বলেও দাবি সংগঠনের।
BBDBM বলছে, এই ধরনের পদক্ষেপ নতুন নয়। এর আগেও এসবিআই তাদের ইনকাম ট্যাক্স বিভাগ, গভর্নমেন্ট অ্যাকাউন্টস সেকশন, ব্যালেন্স শিট বিভাগ ও এমনকি ১৯২০ সালে কলকাতায় স্থাপিত সেন্ট্রাল অ্যাকাউন্টস অফিস মুম্বই বা নাগপুরে স্থানান্তর করেছে।
সংগঠনটি এসবিআই-এর বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলেছে। চিঠিতে তারা লেখে, “অন্য কোনও রাজ্যের ক্ষেত্রে এই ধরনের একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদাহরণ নেই”।
কলকাতার মতো মেট্রোপলিটন শহরে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও রাজ্যের সঙ্গে এই অবিচার মেনে নেওয়া যায় না বলেও জানিয়েছে বিবিডিবিএম।
বিবিডিবিএম মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যে দাবিগুলি পেশ করেছে, সেগুলি হল:
গ্লোবাল মার্কেট ইউনিট এবং সেন্ট্রাল গ্লোবাল ব্যাক অফিসের স্থানান্তর প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
LCPC, CCPC এবং CPPC সহ সমস্ত কেন্দ্রীয় প্রসেসিং সেল কলকাতায় রাখতে হবে।
২০০০ সালের চুক্তি অনুযায়ী ৫০% ফরেক্স ডিলিং কলকাতা থেকে পরিচালনার ব্যবস্থা করতে হবে।
এর আগে সরানো দপ্তরগুলি কলকাতায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গে এসবিআই-এর বাকি অবকাঠামো যেন কোনওভাবেই ভাঙা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
চিঠিতে এসবিআই-র ঐতিহাসিক গুরুত্বও উল্লেখ করেছে বিবিডিবিএম। সংগঠনটি জানায়, ১৮০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাঙ্ক অফ কলকাতা, যা পরবর্তীকালে এসবিআই-তে রূপান্তরিত হয়, তার জন্মভূমি এই শহরেই। এই ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার মুছে ফেলা চলবে না।
বিবিডিবিএম রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করেছে যেন কেন্দ্রীয় আর্থিক পরিষেবা বিভাগ ও এসবিআই-এর শীর্ষ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করে রাজ্যের স্বার্থ রক্ষা করা হয়। সংগঠনটি জানিয়েছে, তারা সরকারি প্রচেষ্টায় পূর্ণ সহায়তা করতে প্রস্তুত।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন