
বাংলায় কথা বলার অপরাধে বাংলাদেশি সন্দেহে দিল্লিতে আটক করা হয় বীরভূমের ছ'জন পরিযায়ী শ্রমিককে। কেন তাঁদের আটক করা হল? কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক অমিত শাহের কাছে মোট ছ’টি প্রশ্নের উত্তর চেয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। সেই উত্তর জানাতে হবে রিপোর্টে। পাশাপাশি, দিল্লির মুখ্যসচিবের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে কথা বলে সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বীরভূমের মুরারই-২ ব্লকের পাইকর গ্রামের বাসিন্দা দানিশ শেখ, তাঁর স্ত্রী সোনালী বিবি ও পাঁচ বছরের ছেলে সাবির শেখ। দিল্লিতে কাগজ ও পুরাতন লোহা কুড়িয়ে রোজগার করতেন তাঁরা। অপরদিকে, মুরারই-১ ব্লকের ধিতোড়া গ্রামের সুইটি বিবি দুই সন্তান কুরবান শেখ ও ইমাম শেখকে নিয়ে সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালাতেন ওই মহিলা। দুই পরিবার সূত্রে খবর, ১৮ জুন দিল্লির রোহিনী পুলিশ জেলার কে. এন কাটজু থানা এলাকায় ছ’জনকে আটক করা হয়।
পরিবারকে খবর দিলে, তাঁরা দ্রুত দিল্লি পৌঁছালে, থানা থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশি সন্দেহে যাঁদের আটক করা হয়েছিল, তাঁদের বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ওই ছ'জন পরিযায়ী শ্রমিককে 'পুশব্যাক' করে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের কোথা থেকে তাঁদের ‘পুশ ব্যাক’ করানো হয়েছে, সে বিষয়ে তথ্য নেই। রাজ্য শ্রম দফতরের সঙ্গেও যোগাযোগ করে শ্রমিকদের পরিবার। এরপরেই দানিশ শেখের পরিবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে।
শুক্রবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি। শুনানিতে মামলাকারীর আইনজীবী আদালতে জানিয়েছেন, কাজের সূত্রে দিল্লির রোহিনীতে থাকতেন তাঁরা। সেখান থেকেই বাংলা বলার অপরাধে আটক করা হয়। ওই শ্রমিকদের ২৪ ঘন্টার বেশি সময় আটকে রাখা হয়। এমনকি পরিচয়ও জানতে চাওয়া হয়নি। এতে শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।
এরপরেই আদালতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে এই মামলা গ্রহণযোগ্য। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, ভারতীয় সংবিধানের ২২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, হিবিয়াস কর্পাসে রুল জারি করার ক্ষমতা আদালতের রয়েছে। এমনকি সেটা যদি অন্য রাজ্যেও হয়, তাহলেও। এবিষয়ে আদালত নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারে না। ওই শ্রমিকদের কেন আটক করা হয়েছিল ছ'টি প্রশ্ন-সহ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছ থেকে এই সংক্রান্ত রিপোর্ট চেয়েছে আদালত।
প্রশ্নগুলি হল -
১। দানিশ, তাঁর স্ত্রী এবং সন্তানকে কী আটক করা হয়েছিল? না তাঁরা নিখোঁজ ছিল?
২। যদি আটক করা হয়ে থাকে, তাহলে বলতে হবে, কোনও আদালতের নির্দেশে করা হয়েছে কিনা।
৩। আটক যদি করা হয়ে থাকে, তাহলে কেন করা হয়েছে?
৪। আটক করার আগে ওই পরিবারকে আটকের কারণ জানানো হয়েছিল?
৫। দিল্লি পুলিশ বা অন্য কোনও তদন্তকারী সংস্থা কি তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত করছে? সেই কারণে গ্রেফতার?
৬। এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং দিল্লির প্রশাসনের মধ্যে কি কোনও কথাবার্তা হয়েছে?
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন