
প্রয়াত হলেন বিশিষ্ট বামপন্থী চিন্তাবিদ, প্রাবন্ধিক আজিজুল হক। সোমবার দুপুর ২ টো ২৮ মিনিট নাগাদ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। সম্প্রতি বাড়িতেই পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে যাওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
প্রয়াত আজিজুল হকের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তাঁর হাতে অস্ত্রোপচারের পর স্থিতিশীল থাকলেও আচমকাই শনিবার তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এরপর ওইদিনই তাঁকে আইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয় এবং রবিবার তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। সোমবার সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
একসময় নকশালবাড়ি আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন আজিজুল হক। রাজনৈতিক কারণে তিনি দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। ১৯৭০-এ পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর ১৯৭৭ সালে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান। যদিও ১৯৮২ সালে ফের তিনি গ্রেপ্তার হন। জেলে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁর মুক্তির দাবিতে সরব হন বহু মানুষ। ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।
রাজ্যে সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলন পর্বে তিনি সরাসরিই বামফ্রন্ট সরকারের পক্ষে দাঁড়ান এবং খোলাখুলি তাঁর মতপ্রকাশ করেন। যা নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বহু কুৎসা করা বলেও তিনি মত বদল করেননি। বাঙলায় ২০১১ সালে পালাবদলের পরেও তিনি বিভিন্ন প্রতিবাদ, বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন।
দীর্ঘদিন আগেই প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন আজিজুল হক। কলকাতায় তৈরি করেছিলেন ‘ভাষা শহিদ স্মারক সমিতি’। এরপর থেকেই তিনি লেখালেখিতেই মনোনিবেশ করেন। কলকাতা ও দেশের বিভিন্ন নামী সংবাদপত্রে তিনি দীর্ঘসময় লেখালিখি করেছেন। এছাড়াও কারাবন্দী থাকা অবস্থায় তিনি রচনা করেন ‘কারাগারে ১৮ বছর’। যে বইতে তিনি কারাগারে থাকাকালীন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কথা তুলে ধরেছিলেন এবং যে বইকে এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলিল হিসেবেই মনে করা হয়।
তাঁর লিখিত অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে আছে ‘লাল টুকটুকে দিন’, ‘মনু মহম্মদ হিটলার’, ‘ছুটন্ত সময় ফুটন্ত মানুষ’, ‘হাতির খোঁজে রাজা’ প্রভৃতি।
১৯৪২ সালের ২৮ আগস্ট হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় এক বর্ধিষ্ণু পরিবারে জন্ম আজিজুল হকের। বহু বিশিষ্ট জন তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন