
যানজটের কারণে টানা ৪০ ঘন্টা ৮ কিলোমিটার রাস্তা অবরুদ্ধ। জ্যামে আটকে অসুস্থ হয়ে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে। ঘটনায় জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। শুনানি চলাকালীন আদালতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই)-এর যুক্তি, "কোনও কাজ ছাড়াই মানুষ কেন তাড়াতাড়ি রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছেন?"
আগ্রা-মুম্বাই জাতীয় মহাসড়কের ইন্দোর-দেওয়াস সড়কে ছয় লেনের রাস্তায় কাজ চলছে। অন্যদিকে, লাগাতার ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে জল জমে রয়েছে রাস্তার অনেকাংশে। এই পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রায় আট কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে চার হাজার গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। যানজটের কারণে প্রায় ৪০ ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকে রাস্তা।
অভিযোগ, যানজটে আটকে পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন গড়ি পিপাল্যা গ্রামের বাসিন্দা সন্দীপ পটেল (৩২)। তাঁকে কোনওরকমে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু রাস্তাতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। এরপর শুক্রবার সকালে সুজালপুরের বলরাম পাটেল (৫৫) এবং ইন্দোরের কমল পাঞ্চাল (৬২) অসুস্থ হয়ে পড়েন। যানজট থেকে তাঁদের বার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু বাঁচানো যায়নি।
এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায়। এরপরেই মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করা হয়। সোমবার বিচারপতি বিবেক রুসিয়া এবং বিচারপতি বিনোদকুমার দ্বিবেদীর বেঞ্চে ছিল মামলার শুনানি। এদিন আদালতে হাজির হয়েছিল বিভিন্ন পক্ষ। তার মধ্যে ছিলেন এনএইচএআই কর্তৃপক্ষ (দিল্লি ও ইনদওরের অফিস), সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রক, ইনদওর জেলাশাসক কর্তৃপক্ষ, ইনদওর পুলিশ কমিশনার ইত্যাদি।
এদিন শুনানিতে যানজটের অসুবিধা এবং মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে প্রশ্নের মুখে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের যুক্তি, ‘‘কাজ ছাড়া এত তাড়াতাড়ি রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছেন কেন মানুষ?’’ এমন মন্তব্যে শোরগোল শুরু হয় কোর্টরুমে। পাল্টা মামলাকারীর পক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘‘দরকার ছাড়া এই যানজটে কেউ ইচ্ছা করে বেরিয়ে পড়েন বলে মনে হয়?’’
মৃত বলরাম পাটেলের ভাইপো সুমিত পাটেল বলেন, ‘‘কোনও কারণ ছাড়া রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর সময় কার হাতে আছে? আমরা এক জনকে বাঁচাতে রাস্তায় নেমেছিলাম। হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল পরিবারের অসুস্থ সদস্যকে। অব্যবস্থার পরে এমন যুক্তি দিলে আর কাকে কী বলার থাকতে পারে"।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এহেন মন্তব্য অসংবেদনশীল মনে করছেন অনেকেই। আদালতের পক্ষ থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে একটি বিকল্প রাস্তার কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ এখনও অসম্পূর্ণ। কাজ শেষ করতে দেরির কারণ হিসাবে কর্মীদের ১০ দিনের ধর্মঘটকে দায়ী করেছে এনএইচএআই। তবে এনএইচএআই-এর এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট নয় আদালত। সকল পক্ষকে আইনি নোটিশের জবাব দেওয়ার জন্য ৭ জুলাই পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।
মামলাকারীর পক্ষে আইনজীবী গিরিশ পটবর্ধন জানান, ‘‘হাই কোর্ট এনএইচএআই, ইনদওর পুলিশ কমিশনার এবং ইনদওর কালেক্টরকে নোটিস জারি করেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের জবাব তলব করেছে। উপরন্তু, আদালত টোল কোম্পানি এবং রাস্তা নির্মাণকারী সংস্থাকে মামলায় ‘পার্টি’ করার নির্দেশ দিয়েছে। এনএইচএআইকে রাস্তার ঠিকাদার এবং টোল অপারেটরকে নোটিস দিতে বলেছে হাই কোর্ট।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আজ (সোমবার) আদালতে এনএইচএআই সওয়াল করেছে, ‘কেন কাজ ছাড়া এত মানুষ আগেভাগে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছেন?’ কোর্টরুমে এই প্রশ্নে আমরা বিস্মিত হয়েছি। মাননীয় আদালত জানায়, এই ধরনের যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। এর ফলে সাধারণ নাগরিক আর নিরাপদে তাদের ঘর থেকে বার হতে পারবেন না। আদালত এই যুক্তিতে গুরুত্বও দেয়নি।’’
আইনজীবীর প্রশ্ন, ‘‘এ বার থেকে বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে কি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ‘পারমিশন স্লিপ’ নিতে হবে মানুষকে?’’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন