
উত্তর প্রদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে বড়সড় পরিবর্তনের পথে হাঁটছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। রাজ্যের অন্তত ২৭ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ধাপে ধাপে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। তার প্রথম ধাপে প্রায় পাঁচ হাজার স্কুলকে ‘একত্রীকরণ’-এর নামে বন্ধ করার সরকারি নোটিস জারি করা হয়েছে। যার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই (SFI)।
সোমবার সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে উত্তর প্রদেশের ৯টি জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল, জমায়েত ও ডেপুটেশন কর্মসূচি করে এসএফআই (স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া)। সুলতানপুর, এলাহাবাদ, সাহারনপুর, বারাণসী, কানপুর, লক্ষ্ণৌ সহ একাধিক জেলায় কয়েকশ ছাত্রছাত্রী মিছিলে অংশ নেয়। মিছিল শেষে জেলাশাসকের দপ্তরগুলিতে সরকারি স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে ডেপুটেশন জমা দেওয়া হয়।
এসএফআই-এর সর্বভারতীয় সভাপতি আদর্শ এম সাজী সুলতানপুরের বিক্ষোভ মিছিল থেকে বলেন, “এই সিদ্ধান্ত শুধুই প্রশাসনিক নয়, এর গভীরে রয়েছে গরিব ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার অধিকারকে হরণ করার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। সরকারি স্কুল বন্ধ করে শিক্ষা ক্ষেত্রকে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি সরকার”।
সাজীর দাবি, সরকারি স্কুল বন্ধ করে দিলে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে যাওয়ার দূরত্ব ও খরচ বৃদ্ধি পাবে, ফলে বহু ছাত্রছাত্রী স্কুলছুট হবে। তিনি বলেন, “যেসব রাজ্যে বিজেপি-র ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকার রয়েছে, সেখানে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেবে”।
সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাকারী তৈয়ব খান সোলেমানির আইনজীবী প্রদীপ যাদব আদালতে জানান, “গত ১৬ জুন উত্তর প্রদেশ সরকার যে নোটিস জারি করেছে, তা কার্যকর হলে কয়েকশো সরকারি স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে”।
তিনি আরও জানান, এই সিদ্ধান্ত ভারতের সংবিধানের ২১(এ) ধারা, অর্থাৎ ‘শিক্ষার মৌলিক অধিকার’-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এলাহাবাদ হাইকোর্ট যদিও এই মামলাটি খারিজ করে দিয়েছিল, তবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে এবং শুনানির অনুমতি দিয়েছে। এই সপ্তাহেই মামলার প্রথম শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সোমবার এক্স-এ পোস্ট করে লেখেন, “উত্তর প্রদেশ সরকার এই অমানবিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দলিত, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। একত্রীকরণের নামে পাঁচ হাজার স্কুল বন্ধ করা হয়েছে। ২৭ হাজার স্কুল বন্ধের পরিকল্পনা রয়েছে”।
তিনি আরও বলেন, “ইউপিএ সরকারের সময়ে শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসাবে সংবিধানে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল এবং প্রতিটি গ্রামে একটি করে স্কুল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বিজেপি সরকার সেই কাঠামো ধ্বংস করে দিচ্ছে।"
যোগী আদিত্যনাথ সরকারের এই সিদ্ধান্ত এখন রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সামাজিক ভারসাম্যের জন্য একটি বড়সড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্দোলনের আঁচ ক্রমেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। এখন দেখার বিষয়, আদালতের রায় এবং রাজনৈতিক চাপে সরকার তার সিদ্ধান্তে কোনও পরিবর্তন আনে কিনা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন