অধ্যাপকের যৌন হয়রানির শিকার হয়ে গত সপ্তাহেই ওড়িশার বালাসোরের এক বিএড ছাত্রী গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। সেই ঘটনার রেশ মেলানোর আগেই একই ধরণের ঘটনা ঘটলো উত্তরপ্রদেশে। রাজ্যের গ্রেটার নয়দার এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শিক্ষকের মানসিক নির্যাতনের প্রতিবাদে আত্মঘাতী হলেন।
আত্মঘাতী ওই ছাত্রী সারদা ইউনিভার্সিটিতে ডেন্টাল সায়েন্স (BDS)-এর দ্বিতীয় বর্ষে পাঠরত ছিলেন। শুক্রবার রাতে তিনি আত্মঘাতী হন। হোস্টেল রুম থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর দেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ডেকান হেরাল্ডে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, যিনি সুইসাইড নোটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে তাঁর দুই শিক্ষকের নাম লিখে গেছেন।
সূত্র অনুসারে, সুইসাইড নোটে ওই ছাত্রী লিখেছেন, দুই শিক্ষক আমাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন…আমি যে কারণে দীর্ঘ সময় ধরে হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় আছি…আমি আর বেঁচে থাকতে পারছি না।
সুইসাইড নোটে ওই ছাত্রী আরও লেখেন, আমি ওঁদের কারাগারে দেখতে চাই। ওরা আমাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে। আমি চাই ওঁরাও এই একই অবস্থা ভোগ করুক।
ছাত্রী আত্মঘাতী হবার পর ওই ছাত্রীর বাবা মায়ের সঙ্গে বৈঠক বসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্পূর্ণ বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্তের জন্য পাঁচ দিন সময় চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আত্মঘাতী ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই ওই দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ছাত্রীর আত্মহত্যার প্রতিবাদে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এই ঘটনায় যুক্তদের শাস্তির দাবিতে এক বিক্ষোভে শামিল হন। ছাত্রীর মা জানিয়েছেন, ওই শিক্ষকরা তাঁর মেয়েকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেবার হুমকি দিতেন।
সারদা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, অভিযুক্ত দুই অধ্যাপককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সমস্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এক কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা যারা এই ঘটনায় অভিযুক্ত বলে প্রমাণিত হবে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয়।
নয়ডার ঘটনার আগে গত ১২ জুলাই ওড়িশার বালাসোরের ফকির মোহন কলেজ (অটোনোমাস)-এর ২০ বছর বয়সী এক ছাত্রী কলেজ ক্যাম্পাসেই গায়ে আগুন দেন। তিনি বি.এড পড়তেন। গত ১ জুলাই বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সমীর কুমার সাহুর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। কলেজের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটিকে লেখা চিঠিতে তিনি জানান, অধ্যাপকের দ্বারা গত কয়েক মাস ধরে যৌন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন তিনি। কলেজ সূত্রে খবর, সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত অধ্যাপকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এই ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ দিলীপ ঘোষ এবং প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনাল কমপ্লেইন্টস কমিটির বিরুদ্ধেও। জানা গেছে, ওই ছাত্রী বারবার যৌন হেনস্থার বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এরপরেই চরম পথ বেছে নেন ছাত্রী।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন