ওড়িশায় এক বিএড কলেজে যৌন হেনস্থার শিকার হয়ে এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে রাজ্যের বিজেপি সরকারের। এই ঘটনায় রাজ্যের মহিলাদের সুরক্ষায় প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগ ওঠায় যথেষ্টই বিব্রত রাজ্যের মোহন চরণ মাঝি সরকার। ওই ছাত্রীকে নব্বই শতাংশ অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ভর্তি করা হয় ভুবনেশ্বরের অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্স-এ। যেখানে আজ সোমবার ১৪ জুলাই এক অনুষ্ঠানে আসছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
বালাসোরের ফকির মোহন কলেজ (অটোনোমাস)-এর ২০ বছর বয়সী ওই ছাত্রী বিএড পড়তেন। এক যৌন হেনস্থার ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যথোপযুক্ত বিচার না পেয়ে তিনি কলেজ ক্যাম্পাসেই গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হন। তাঁকে ওড়িশার অন্যতম পুরোনো ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় ভুবনেশ্বরের এইমস-এ। সেখানেই তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি আছেন।
এই ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ দিলীপ ঘোষ এবং প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনাল কমপ্লেইন্টস কমিটির বিরুদ্ধে। জানা গেছে, ওই ছাত্রী বারবার যৌন হেনস্থার বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এরপরেই তিনি চরম পথ বেছে নেন। নির্যাতিতা ছাত্রীর বাড়ি বালাসোর জেলার পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া গ্রাম ভোগরাইতে।
নির্যাতিতা ছাত্রী জানিয়েছিলেন, ওই কলেজেরই এক অধ্যাপক, যিনি এডুকেশন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তাঁকে যৌন হেনস্থা করেন এবং তাঁর ভবিষ্যৎ শেষ করে দেবার হুমকি দেন। বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানান সত্ত্বেও নির্যাতিতার পক্ষ না নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত অধ্যাপকেরই পক্ষ নেন। এরপরেই শনিবার কলেজ ক্যাম্পাসে ওই ছাত্রী গায়ে আগুন দেয়। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে ওই ঘটনায় দুই ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছে।
ইতিমধ্যেই এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে পথে নেমেছে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেডি ও কংগ্রেস। এই ঘটনায় এক সুয়ো মুটো অভিযোগ দায়ের করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। ঘটনার পর কলেজের প্রিন্সিপ্যালকে সাসপেন্ড করা হয়েছে ও অভিযুক্ত অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক এই ঘটনা প্রসঙ্গে এক এক্স বার্তায় রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা করে জানিয়েছেন, “ওড়িশার অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক তরুণী ছাত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক এবং গভীরভাবে বেদনাদায়ক। আমি ভগবান জগন্নাথের কাছে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করি যেন তিনি এই ভয়াবহ অগ্নিদগ্ধ অবস্থা থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন।”
ওই এক্স বার্তাতেই তিনি আরও বলেন, “একজন শিক্ষক বারবার যৌন সম্পর্ক দাবি করায় তাকে নিরলস যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। অধ্যক্ষের কাছে লেখা এক চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন যে তিনি এর আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু বেঁচে গিয়েছিলেন।”
নবীন পট্টনায়েক জানিয়েছেন, “কয়েক মাস ধরে তিনি ভয় ও যন্ত্রণার মধ্যে জীবনযাপন করছিলেন। ১ জুলাই, সাহায্যের জন্য মরিয়া হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার অভিযোগ পোস্ট করে, বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে ট্যাগ করেন। কিন্তু এরপরেও কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায়, তিনি দুঃখজনকভাবে নিজের কষ্ট দূর করার চূড়ান্ত প্রচেষ্টায় অধ্যক্ষের চেম্বারের বাইরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
এই মর্মান্তিক ঘটনাটি কলেজের অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষামন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত বারবার অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কীভাবে তাকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হল তার স্পষ্ট বাস্তবতা তুলে ধরে।”
ওড়িশা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় এক্স হ্যান্ডেলে এক বিবৃতিতে রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলা হয়েছে, “আত্মহত্যার চেষ্টা খুবই মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক, - শুনেছেন কি রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী? - ঘুম থেকে উঠুন। আমাদের রাজ্যকে ধ্বংস করবেন না। প্রতিদিন ওড়িশা নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, খুন, নির্যাতনের খবরে শিরোনামে - কী হচ্ছে এসব? ওড়িশার মানুষ কি এসব দেখার জন্য বিজেপিকে নির্বাচিত করেছে?”
গত জুন মাসেই ওই ছাত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন এবং সেই অ্যাকাউন্ট থেকেই গত ১ জুলাই তাঁর করা যাবতীয় অভিযোগ শেয়ার করেন। যেখানে অভিযুক্ত অধ্যাপকের ছবি পোষ্ট করে ওই ছাত্রী লেখেন, “যদি আমি বিচার না পাই তাহলে আমি আত্মহত্যা করবো।” এই পোষ্টে তিনি কলেজের ছাত্র সংসদের সদস্যদের এবং রাজ্যের প্রশাসনকে ট্যাগ করেছিলেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন