২০২৭ উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করল বহুজন সমাজ পার্টি (BSP)। বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর নেতৃত্বে লখনউতে 'মেগা র্যালি' আয়োজন করেছিল বিএসপি। মিছিলে বিএসপি সমর্থকদের জোয়ার চোখে পড়ে। দীর্ঘ চার বছর কার্যত চুপ করে থাকার পরে হঠাৎ করে মায়াবতীর দলের এই সমাবেশ ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। এদিনের সমাবেশ থেকে বিজেপির ভূয়সী প্রশংসা করেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী।
বৃহস্পতিবার অর্থাৎ আজ বিএসপি-র প্রতিষ্ঠাতা কাঁশি রামের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁকে স্মরণ করে লখনউয়ের কাঁশি রাম মেমোরিয়াল ময়দানে দলীয় সভার আয়োজন করে বহুজন সমাজ পার্টি। বিএসপি সমর্থকে ভরে যায় ময়দান। উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে সাম্প্রতিক সময়ে বিএসপি-র এত বড় সভা দেখা যায়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ২০২৭ নির্বাচনকে সামনে রেখেই এই সভার আয়োজন করা হয়েছে। যাতে সমর্থকরা নির্বাচনে লড়ার জন্য বাড়তি অক্সিজেন পান। মায়াবতী শেষবার এই ধরণের সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন ৯ অক্টোবর, ২০২১-এ। ২০২২ সালের উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগে। বিএসপি মাত্র একটি আসনে নেমে আসে এবং তাদের ভোট শতাংশের হার কমে দাঁড়ায় ১২.৮-এ।
পিছিয়ে পড়া মানুষের কথা মাথায় রেখে ১৯৮৪ সালে বিএসপি প্রতিষ্ঠিত করেন কাঁশি রাম। ২০০৭ সালে ২০৬ আসন জিতে উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে ইতিহাস সৃষ্টি করে বিএসপি।
যদিও ২০১২ সাল থেকে পার্টি ক্রমশ দুর্বল হয়েছে। সমাজবাদী পার্টি (এসপি) সেই বছর বিএসপিকে ক্ষমতাচ্যুত করে। বিএসপি-র আসন সংখ্যা ২০৬ থেকে কমে ৮০-তে নেমে যায়। পরবর্তী নির্বাচনেও এই পতনের ধারা অব্যাহত ছিল। ২০১৭ সালে, বিএসপি আসন সংখ্যা ১৯-এ নেমে আসে এবং ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র একটি আসন জয়ী হয় বিএসপি। যদিও সেবার ১২.৮৮% ভোটও পেয়েছিল বিএসপি। বর্তমানে বিএসপির একমাত্র বিধায়ক হলেন বালিয়া থেকে নির্বাচিত উমা শঙ্কর সিং।
২০১৪ এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিএসপি কোনও আসনে জয়ী হতে পারেনি। তবে, ২০১৯ সালে মায়াবতী এসপির সাথে জোট গঠনের পর ১০টি আসনে জয়ী হয়। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে, বিএসপি একাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং কোনও আসন না পেলেও উত্তরপ্রদেশে প্রায় ৯.৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।
২০২৩ সালে, মায়াবতী তাঁর ভাগ্নে আকাশ আনন্দকে তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে ঘোষণা করেন এবং তাঁকে জাতীয় সমন্বয়কারী হিসেবে নিযুক্ত করেন। অনেকেই ভেবেছিলেন নতুন করে শক্তিশালী হবে বিএসপি। তবে, দলের অন্দরেই বারবার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় আকাশ আনন্দকে। ২০২৪ সালের মে থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিলের মধ্যে তাঁকে দু'বার বহিষ্কার এবং পুনর্বহাল করা হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি বিএসপি সক্রিয়ভাবে মাঠে নেমে দলিত ভোট আরও মজবুত করতে পারে, তবে ২০২৭ সালের নির্বাচন ত্রিমুখী লড়াইতে পরিণত হতে পারে।
যদিও এই সমাবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অজয় রাই। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, "আপনারা যে জনতার কথা বলছেন তা সম্পূর্ণরূপে ভাড়া করা। এর জন্য টাকা যুগিয়েছে বিজেপি। যানবাহন সরবরাহ করা হয়েছে, আরটিও সরকারী ব্যবস্থাপনায় তাদের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করেছে এবং ডিজেল ভরে দিয়েছে..."
এদিনের মায়াবতীর দলের সমাবেশ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও বিতর্ক শুরু হয়েছে। কারোর কারোর মতে, এতদিন মায়াবতী বিজেপিকে ভোট ট্রান্সফার করাতেন। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলিতদের মধ্যে কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা ক্রমশ বেড়ে চলায় শঙ্কিত হয়ে বিজেপির পরামর্শে তিনি আজকের সভার ডাক দিয়েছেন।
যদিও এইসব অভিযোগের উত্তর দিয়েছেন বিএসপি-র রাজ্য সভাপতি বিশ্বনাথ পাল। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, "আমরা কোনও দলের 'বি' টিম নই এবং আমি এমন কোনও নেতাদের সম্পর্কে মন্তব্য করব না যারা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ২০০৭ সালের মতো, বিএসপি ২০২৭ সালে তার পরবর্তী সরকার গঠনের জন্য মাঠে নেমে প্রস্তুতি নিচ্ছে।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন