
কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা নতুন কিছু নয়। নিশানায় থাকে সাধারণত সেনাবাহিনী। কিন্তু মঙ্গলবার পহেলগাঁওতে জঙ্গিদের নিশানায় ছিলেন নিরীহ পর্যটকরা। ২৬ জন পর্যটকের নির্বিচারে হত্যা কার্যত নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা কাশ্মীরকে। বাকিরা যত দ্রুত সম্ভব ছাড়তে চাইছেন কাশ্মীর। এই আবহে দেখা গেল এক অন্য চিত্র। কাশ্মীরিদের উপর বিশ্বাস করে নিজেদের ভ্রমণ চালিয়ে যাওয়ার কথা বললেন মহারাষ্ট্রের দুই মহিলা।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এক মহিলা পর্যটক জানান, তিক্ত স্মৃতি নিয়ে বাড়ি ফিরতে চান না তিনি। তাঁর কথায়, “কিছু মানুষ বারবার আমাদের বিমান বুক করতে বলছেন। আমাদের ফিরে যেতে বলছেন। পরে আবার আসতে বলছেন। কারণ যা ঘটেছে তা ভয়ঙ্কর। কিন্তু আমরা ভীত নয়। আমরা পহেলগাঁও ছেড়ে যাচ্ছি কিন্তু কাশ্মীর ছাড়ব না”।
অন্য এক মহিলা জানিয়েছেন, “এখনকার স্থানীয়দের আমরা ভরসা করি। তারা যেভাবে আমাদের সাথে আচরণ করেছেন, তারা আমাদের আস্থা অর্জন করেছেন। তারা সবসময় আমাদের সাহায্য করেছেন”।
তিনি আরও বলেন, “শুরু থেকে আমাদের গাড়ির চালক আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি আমাদের ধর্ম কী জানতে চাননি। নিজের নিরাপত্তার কথা মাথায় না রেখে আমাদের অগ্রাধিকার দিয়েছেন। আমারা আমাদের ভ্রমণ চালিয়ে যাব, কারণ এই জায়গাটি খুবই সুন্দর”।
অন্যদিকে, পহেলগাঁওতে এই জঙ্গি হামলার ফলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সেখানকার পর্যটন শিল্প নিয়ে। মার্চ থেকে মে – এই তিন মাস কাশ্মীরে হাজার হাজার পর্যটক যান। মূলত পর্যটকদের উপরই নির্ভর করে কাশ্মীরের আর্থ সামাজিক ব্যবস্থা। কিন্তু হঠাৎ এই হামলার পর নিরাপত্তার কারণে সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এদিকে, এই ঘটনায় লজ্জিত পহেলগাঁও হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা। এক সংবাদমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, “একজন মানুষ হিসাবে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। আমরা অত্যন্ত লজ্জিত। পহেলগাঁওতে এই ঘটনা ঘটার জন্য় আরও লজ্জিত। শুধু পহেলগাঁওয়ের নয়, এর মাধ্যমে আমাদের নামও খারাপ হয়ে গেল। এই মানুষগুলোর সঙ্গে রাজনীতি বা জঙ্গিবাদের কোনও যোগ নেই। তাঁরা তো ঘুরতে এসেছিলেন। আনন্দ করতে এসেছিলেন। ওদের খুন করা হল। অত্যন্ত খারাপ লাগছে। বুকিং বাতিল হয়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগ পহেলগাঁও প্রায় ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। আমাদের কাছে সাত আটজন রয়েছেন। তাঁরাও কাল চলে যাবেন। আবার আমরা ঘুরে দাঁড়াব”।
অন্যদিকে, এই ঘটনার জেরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। পাকিস্তানের সরকারি এক্স অ্যাকাউন্টটি ভারতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার সকালে। এছাড়া যত দিন না পাকিস্তান আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের প্রতি তার সমর্থন প্রত্যাহার করছে, তত দিন সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন