
ভারতের রাজ্যগুলিতে ক্রমশ বাড়ছে ঋণের বোঝা। গত এক দশকে রাজ্যগুলির মোট সরকারি ঋণ তিন গুণেরও বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৯.৬০ লক্ষ কোটি টাকায়। সম্প্রতি প্রকাশিত ক্যাগ রিপোর্টে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। সর্বাধিক ঋণের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।
শুক্রবার স্টেট ফাইন্যান্স সেক্রেটারিজ কনফারেন্সে সঞ্জয় মূর্তি এই রিপোর্ট পেশ করেন। প্রথম বার এই ধরনের রিপোর্ট তৈরি করেছেন তাঁরা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে রাজ্যগুলির মোট ঋণ ছিল ১৭.৫৭ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯.৬০ লক্ষ কোটি টাকায়। অর্থাৎ গত এক দশকে ৩.৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে ঋণের পরিমাণ।
২০১৩-১৪ সালে রাজ্যগুলির জিডিপি-এর তুলনায় ঋণের হার ছিল ১৬.৬৬%, যা ২০২২-২৩ সালে প্রায় ২৩%-এ পৌঁছেছে। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির হিসাবে, রাজ্যগুলির সম্মিলিত ঋণ ভারতের জিডিপি-র ২২.১৭%।
৮টি রাজ্যে জিডিপি-র তুলনায় ঋণের পরিমাণ ৩০%-এর বেশি, ৬টি রাজ্যে ২০%-এর কম এবং বাকি রাজ্যগুলি ২০% থেকে ৩০%-এর মধ্যে রয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবর্ষ শেষে, জিডিপি-র তুলনায় সর্বাধিক ঋণ রয়েছে পাঞ্জাবের (৪০.৩৫%)। এরপরে রয়েছে নাগাল্যান্ড (৩৭.১৫%) এবং পশ্চিমবঙ্গ (৩৩.৭০%)। অন্যদিকে, ওড়িশা সর্বনিম্ন (৮.৪৫%)। তারপর মহারাষ্ট্র (১৪.৬৪%) এবং গুজরাট (১৬.৩৭%)-এর ঋণের হারও তুলনামূলকভাবে কম।
অর্থনীতিবিদদের মতে কোভিডের কারণে রাজ্যগুলিতে ঋণের পরিমাণ অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে রাজ্যগুলির ঋণ-জিডিপি-র অনুপাত ২১% থেকে বেড়ে ২৫% হয়ে যায়। কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব অর্থনীতিকে ধাক্কা দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্যগুলিকে বেশি ঋণ নিতে বাধ্য করে।
ক্যাগ রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজ্যগুলি বিভিন্ন উপায়ে ঋণ তোলে। যেমন - বাজার থেকে বন্ড ও ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে, ব্যাংক ঋণ, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে Ways and Means Advances এবং এলআইসি ও নাবার্ড-এর মতো প্রতিষ্ঠান থেকেও অর্থ সংগ্রহ করে। রিপোর্টে সতর্ক করা হয়েছে যে, বহু রাজ্য ঋণ নিচ্ছে শুধুমাত্র মূলধনী খরচে বিনিয়োগের জন্য নয়, আয়ের ঘাটতি পূরণ করতেও।
অর্থনীতিবিদদের মত, কেন্দ্র বা রাজ্য, সব সরকারই বাজার থেকে ধার করে। সেই ধারের টাকা সঠিক জায়গায় বা পরিকাঠামো তৈরিতে খরচ হলে কোনও সমস্যা নেই। কারণ, পরিকাঠামো তৈরি হলে অর্থনীতিতে গতি আসে। কিন্তু ধারের টাকা যদি অনুদান প্রকল্প চলে যায়, তা হলে আয়বৃদ্ধির তুলনায় ঋণের বোঝাবৃদ্ধির হার লাগাতার বাড়তে থাকবে। তখনই সমস্যা শুরু।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন