
এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি মনোহর নারায়ণ মিশ্র সম্প্রতি একটি রায়ে বলেছিলেন 'স্তন ধরে খামচানো বা পাজমার দড়ি খুলে দেওয়া মানেই ধর্ষণের চেষ্টা নয়'। বিচারপতির এই রায় নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন ইন্দিরা জয়সিংহের মতো সিনিয়র আইনজীবীরা। কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবীও এই রায়ের তীব্র নিন্দা জানিয়েছছিলেন। এবার এই বিতর্কিত রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা।
কিছু দিন আগেই এলাহাবাদ হাইকোর্টে এক নাবালিকার উপর হওয়া যৌন নির্যাতনের মামলার শুনানি ছিল। শুনানি চলাকালীন বিতর্কিত মন্তব্য করেন বিচারপতি মিশ্র। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি এজি মাসিহ-র বেঞ্চ ওই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দেয়।
দুই বিচারপতির বেঞ্চ তাদের পর্যবেক্ষণে জানায়, "সম্পূর্ণ অসংবেদনশীল রায় এটি। এই রায় তাৎক্ষণিক নয়। কমপক্ষে ৪ মাস পর রায় ঘোষণা করা হয়েছে। সেই কারণে এই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হল। বিচারপতি অসংবেদনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। একজন বিচারপতির সম্পর্কে এই ধরণের বক্তব্য রাখার জন্য আমরা দুঃখিত।"
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে উত্তরপ্রদেশের কাসগঞ্জে ১১ বছর বয়সী এক নাবালিকার উপর পবন এবং আকাশ নামে দুই ব্যক্তি শারীরিক নির্যাতন চালায়। তারা নাবালিকার বুকে হাত দেয়, স্তন ধরে টানে, পাজামার দড়ি ছিঁড়ে দেয় এবং একটি কালভার্টের নীচে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। সেইসময় মেয়েটির চিৎকারে স্থানীয়রা সেখানে চলে আসায় অভিযুক্তরা চম্পট দেয়। প্রসিকিউশন জানিয়েছেন, নাবালিকা রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল, সেইসময় অভিযুক্তরা তাকে বাইকে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে তাদের সাথে নিয়ে যায় এবং তারপর এগুলো করেছিল।
এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি মনোহর নারায়ণ মিশ্র তাঁর আদেশে বলেন, "অভিযুক্ত আকাশের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ হল, সে নির্যাতিতাকে কালভার্টের নীচে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং তার পাজামার দড়ি খুলে দিয়েছিল। এতে প্রমাণ হয় না যে ওই ব্যক্তির ধর্ষণের অভিপ্রায় ছিল। সাক্ষীরাও তাঁদের বয়ানে বলেননি যে, নির্যাতিতা নগ্ন হয়ে পড়েছিল। অভিযুক্তরা নির্যাতিতার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা করেছে এমন কোনও তথ্য নেই। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে লঘু অভিযোগের জন্য সমন জারি করা যেতে পারে।"
বিচারপতির এই নির্দেশের পরই গোটা দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। আপত্তি জানান একাধিক সিনিয়র আইনজীবীও। ‘উই দ্য উইমেন অফ ইন্ডিয়া’ নামে একটি সংগঠন এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করার পরই সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলার শুনানি করে। নির্যাতিতার মা-ও হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। দুটি মামলা একসাথে জুড়ে আজ এই নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন