
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) শিক্ষাগত যোগ্যতার মতই দেখানো যাবেনা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ স্মৃতি ইরানীর (Smriti Irani) শিক্ষাগত যোগ্যতার রেকর্ডও। সোমবার দিল্লি হাইকোর্টে বিচারপতি শচীন দত্তের সিঙ্গল বেঞ্চ বিষয়টিকে “ব্যক্তিগত তথ্য” বলে জানিয়ে মুখ্য তথ্য কমিশনারের (CEC) নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছেন।
সোমবার এই বিষয়ে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি শচীন দত্ত স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে তথ্যের অধিকার আইনের (Right to Information Act) ধারা ৮(৩) কোনোভাবেই ধারা ৮(১)(জে) অধীন গোপনীয়তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল করে না। তিনি আরও বলেন, আইনগত বিধান সাংবিধানিক বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাখ্যা করা উচিত।
দিল্লি হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ সোমবার স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তথ্যের অধিকার আইনের ধারা ৩-এর অধীনের তথ্যের অধিকার কোনোভাবেই নিরঙ্কুশ নয়। আদালত আরও জানিয়েছে যে এই বিষয়টির মধ্যে কোনোভাবেই কোনও জনস্বার্থ জড়িত নেই।
আদালত এদিন জানিয়েছে, জনস্বার্থের কারণে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরণ সংবিধানের অধীনে কোনও ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে সুরক্ষিত। পর্যাপ্ত যুক্তি ছাড়া এই ধরণের তথ্য প্রকাশ করা একটি অননুমোদিত অনুপ্রবেশের সমান।
স্মৃতি ইরানীর বিষয়ে রায় দেবার আগে এদিনই বিচারপতি দত্তের বেঞ্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে একই রায় দেন এবং জানান, নাগরিকরা কারও ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কৌতূহলী হতে পারে, কিন্তু এই ধরনের কৌতূহল গোপনীয়তার আইনগত সুরক্ষাকে অগ্রাহ্য করে না।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে মুখ্য তথ্য কমিশনারের কাছে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রকাশ করার আর্জি জানানো হয়। কমিশনার ওই বছরই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দেয় তথ্য প্রকাশের। কমিশনার এম শ্রীধর আচারিয়ুলুর যুক্তি ছিল, প্রধানমন্ত্রীর মতো জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষাগত যোগ্যতার নথি জনসমক্ষে আসা উচিত। এই নির্দেশের বিরুদ্ধে দিল্লি হাই কোর্টে যান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রায় ১০ বছর ধরে চলে এই মামলা।
চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি দিল্লি হাইকোর্টে এই সংক্রান্ত শুনানিতে বলা হয়, তথ্য জানানোই আরটিআই আইনের উদ্দেশ্য। কিন্তু কোনও ব্যক্তির ব্যক্তিগত কৌতূহল নিবৃত্তি এই আইনের লক্ষ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডিগ্রি বিতর্কে দিল্লি হাইকোর্টে একথা জানিয়েছিলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে আইনজীবী সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ স্মৃতি ইরানীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও বিতর্ক বেশ পুরোনো। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনটি আলাদা আলাদা নির্বাচনে তিনি নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে আলাদা আলাদা হলফনামা পেশ করেছেন।
২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় স্মৃতি ইরানী জানিয়েছিলেন তিনি ১৯৯৬ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় (স্কুল অফ করসপন্ডেন্স) থেকে আর্টস-এ স্নাতক। সেবার তিনি দিল্লির চাঁদনী চক কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।
এরপর ২০১১ সালে রাজ্যসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় হলফনামায় তিনি জানান তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা বি কম (পার্ট ওয়ান)। অন্য একটি হলফনামায় তিনি জানিয়েছিলেন, ১৯৯১ সালে তিনি সেকেন্ডারি স্কুল পরীক্ষা এবং ১৯৯৩ সালে তিনি হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল পরীক্ষা পাশ করেছিলেন।
২০১৪ সালে আমেঠি লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় তিনি হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে বলেন ১৯৯৪ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওপেন লার্নিং (করসপন্ডেন্স) থেকে বি কম পার্ট ওয়ান পাশ করেছেন।
২০১৬ সালে দিল্লি আদালতে স্মৃতি ইরানীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে মামলা হয়। কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও স্মৃতি ইরানীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এই সময় একাধিক বিষয়ে কংগ্রেসকে তীক্ষ্ণ ভাষায় আক্রমণ করলেও নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রসঙ্গে স্মৃতি ইরানী মুখ খোলেননি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন