

আসামে রবি ঠাকুরের লেখা 'আমার সোনার বাংলা' গান গাওয়ায় দেশদ্রোহিতার মামলা রুজু করা হচ্ছে কংগ্রেস কর্মীদের বিরুদ্ধে। আসাম পুলিশকে এমনই নির্দেশ দিয়েছেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। বিজেপি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অপমান করছে বলে অভিযোগ হাত শিবিরের।
মঙ্গলবার আসামের শ্রীভূমি জেলায় কংগ্রেস কার্যালয়ে সেবাদলের অনুষ্ঠানে বিধুভূষণ দাস নামের এক প্রবীণ কংগ্রেস কর্মী রবি ঠাকুরের লেখা 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি' গানটি গান। এই গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতও। ওই সভায় 'বন্দেমাতরম' এবং 'জাতীয় সঙ্গীত'ও গাওয়া হয়। কিন্তু বিজেপির পক্ষ থেকে সমাজমাধ্যমে কেবল 'আমার সোনার বাংলা' গান গাওয়ার ভিডিওটি ভাইরাল হয় এবং কংগ্রেসকে ‘বাংলাদেশের মোহে আচ্ছন্ন’ বলে আক্রমণ করা হয়।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, 'শ্রীভূমি জেলায় কংগ্রেসের এক সভায় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত আসামে পরিবেশন করা কিছুতেই মেনে নেওয়া যাবে না। সেই কারণেই আসামের কংগ্রেস কর্মীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করতে আসাম পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি। তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর হবে, গ্রেফতার করা হবে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে'।
এক্স মাধ্যমে বিজেপি মুখপাত্র প্রদীপ ভাণ্ডারী লেখেন, "আসামের বরাক উপত্যকায় কংগ্রেস সেবাদলের একটি অনুষ্ঠানে, সিনিয়র কংগ্রেস নেতা বিধু ভূষণ দাসকে "আমার সোনার বাংলা" - বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে দেখা গেছে! রাহুল গান্ধী এবং আসাম কংগ্রেস নীরব, কারণ এটিকে নেতৃত্ব প্রশংসা করছে। অপমানজনক এটি। কংগ্রেস ভারত-বিরোধী"।
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিজেপির এই আক্রমণের কড়া জবাব দেওয়া হয়। জানানো হয়, "বিজেপি বলছে, 'আমার সোনার বাংলা' গানটি গাইলে নাকি তা 'ভারত-বিরোধী' কাজ! এই কথা বলে দেশপ্রেমিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেই অপমান করলো বিজেপি। 'আমার সোনার বাংলা' গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি বিখ্যাত গান। আবহমান বাংলার প্রতি কবির অনাবিল ভালোবাসা এই গানের পরতে পরতে ঝরে পড়েছে। ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের আনা 'বঙ্গভঙ্গ' প্রস্তাবের বিরুদ্ধে যখন 'স্বদেশী আন্দোলন' চলছিল, তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গানটি রচনা করেছিলেন। এই গানটি ব্রিটিশ বিরোধী 'স্বদেশী আন্দোলন'- এ এক অনন্য মাত্রা যোগ করেছিল"।
তারা আরও জানায়, "অনেক পরে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠিত হবার পর বাংলাদেশ তাদের জাতীয় সঙ্গীত রূপে এই গানটিকে গ্রহণ করে। সুতরাং এই গানটি কেবল বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত - এটিই একমাত্র পরিচয় নয়। এই গানটি যুগে যুগে দেশকালের বেড়া ভেঙে আপামর বাঙালির প্রাণের গান। এই গান গাইলে সে ভারত-বিরোধী???? আসলে ইতিহাসকে বিকৃত করাই BJP-RSS'এর কাজ!"
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি (আসাম) গৌরব গগৈ জানান, "বিজেপি সর্বদা বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি এবং বাংলার মানুষকে অপমান করেছে। তাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড আবারও বাংলার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উত্তরাধিকার এবং তাঁর দর্শন সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। আমার মনে হয় বাংলার মানুষ এবং দেশের বিভিন্ন অংশের বাংলাভাষী মানুষ বুঝতে পেরেছেন যে বিজেপি কেবল ভোটের জন্য তাদের ব্যবহার করে কিন্তু তাদের সংস্কৃতি, ভাষা এবং তাদের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করে না।"
বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে সিপিআইএমও। সিপিআইএম আসামের রাজ্য সম্পাদক সুপ্রকাশ তালুকদার বলেন, রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকে ধ্বংস করতে চাইছে বিজেপি। রবীন্দ্রনাথ সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তির চক্ষুশূল। কবিগুরু মানবতার গান গেয়েছেন। যা বিজেপির নীতি ও আদর্শের বিরোধী। বাংলাদেশ তৈরির আগেই এই গান রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
উল্লেখ্য, আসামে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরই করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করে শ্রীভূমি করা হয়। সেই সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে হাতিয়ার করেই জেলার নাম পরিবর্তনের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। ১৯১১ সালে সিলেট সফরে গিয়ে কবিগুরু একটি শিরোনামহীন কবিতা লেখেন। যেখানে 'সুন্দরী শ্রীভূমি' কথাটি উল্লেখ আছে। সেই কারণে জেলার নাম হিসেবে শ্রীভূমি নামটি বেছে নেওয়া হয়।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন