

যোগীরাজ্যের প্রাক্তন বিধায়ক তথা বিজেপি নেতার সাম্প্রদায়িক মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। ডুমরিয়াগঞ্জের প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক রাঘবেন্দ্র প্রতাপ সিং সম্প্রতি এক জনসভায় বলেছেন, "কোনও হিন্দু যুবক যদি মুসলিম মেয়েকে তুলে এনে বিয়ে করে, আমি তার বিয়ের সব খরচ দেব। এবং ওই যুবকের চাকরির ব্যবস্থাও করে দেব।" এমনকি জোর গলায় তিনি আরও বলেছেন, হিন্দুরা এই রাজ্যে নির্ভয়ে যা খুশি তাই করতে পারে। এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।
গত ১৬ অক্টোবর সিদ্ধার্থনগর জেলার ঢাঁখরপুর গ্রামের ঘটনা। অভিযোগ, ওই গ্রামের দুই হিন্দু মেয়েকে জোর করে মুসলিম ছেলেদের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি ধর্মান্তরিত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার পরে ওই গ্রামে যান বিজেপি নেতা এবং সেখানেই এই বিতর্কিত বক্তব্য রাখেন।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে রাঘবেন্দ্র প্রতাপ সিংকে বলতে শোনা যায়, “যদি দু'জন হিন্দু মেয়ে চলে যায়, তবে অন্তত দশজন মুসলিম মেয়েকে নিয়ে আসুন এবং তাদের বিয়ে করুন। বাকিটা আমি বুঝে নেব। আমরা আপনাদের পাশে আছি, ভয় পাবেন না। এটা অখিলেশ যাদবের আমল নয়, এখন যোগী আদিত্যনাথের যুগ চলছে।”
তিনি আরও বলেন, "কোনও হিন্দু যুবক মুসলিম মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেলে, আমি তাদের বিবাহের ব্যবস্থা করব এবং তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করব।"
বিজেপি নেতার এই মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। কিন্তু তারপরেও নিজের মন্তব্যে অনড় তিনি। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “ডুমরিয়াগঞ্জ একসময় ‘মিনি পাকিস্তান’ নামে পরিচিত ছিল। যোগীজির নেতৃত্বে এখন সন্ত্রাসীদের দাপট কমেছে। আগে হিন্দু মেয়েরা নিরাপদ ছিল না। এখন কেউ ভয় পাবে না—আমরা পাশে আছি।”
তিনি আরও বলেন, "আমি সেখানে গিয়ে জনগণকে বুঝিয়ে বললাম যে তাদের জেগে ওঠা এবং প্রতিহত করার দরকার। আতঙ্কিত হওয়ার বা ভয় পাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। আমি বলেছিলাম, যদি দুটি হিন্দু মেয়েকে অপহরণ করা হয়, তাহলে আপনাদের দশটি মুসলিম মেয়েকে নিয়ে আসা উচিত। আমরা বিয়ের খরচের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেব এবং তাদের নিরাপত্তারও নিশ্চয়তা দেব।"
বিজেপি নেতার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ সমাজবাদী পার্টি। দলের ডুমরিয়াগঞ্জের বিধায়ক সাইয়াদা খাতুন বলেন, “রাঘবেন্দ্র প্রতাপ সিংহের বক্তব্য নারী ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি সরাসরি অপমান। দেশটা সবার, মুসলমানরাও এই দেশের নাগরিক। প্রশাসন নীরব দর্শক হয়ে আছে। যদি উত্তেজনা ছড়ায়, তার দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে।”
সিপিআইএম নেত্রী সুভাষিণী আলি এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে বলেন, "এটা শুধু মুসলিম বিরোধী বা মহিলা বিরোধী কথা নয়। এটা থেকে বিজেপির মনুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ পাওয়া যায়। দশজন মুসলিম মেয়েকে তুলে আনার কথা বলার মাধ্যমে উনি হিন্দু যুবকদেরও অপমান করছেন।"
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন