
লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলগুলি। শনিবার দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানও বৈঠকে বসেন। বৈঠকে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত আরও ২৫ বছর পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন বৈঠকে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য মুখ্যমন্ত্রীরা। যদিও বৈঠকে তৃণমূলের তরফ থেকে কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না।
স্ট্যালিনের ডাকে আয়োজিত ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’র এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিআইএম নেতা পিনারাই বিজয়ন, তেলঙ্গানার কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ও আপ নেতা ভগবন্ত মান এবং কর্ণাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডিকে শিবকুমার।
বৈঠকে যৌথ কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে, দেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা এখনও পূরণ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে লোকসভা আসন পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্ত আরও ২৫ বছরের জন্য স্থগিত রাখা উচিত। যে সমস্ত রাজ্য জন্মহার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়িত করেছে, তারা কেন শাস্তি পাবে?
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, জনসংখ্যার ভিত্তিতে লোকসভা আসনের সংখ্যা পুনর্বিন্যাস হওয়ার কথা। বিরোধীদের আশঙ্কা, ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই কেন্দ্রীয় সরকার একতরফাভাবে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে মূলত হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলির আসনসংখ্যা বাড়বে, কিন্তু দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম থাকবে।
দক্ষিণের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মনে করছে, তাদের রাজ্যগুলি জন্মহার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়িত করেছে। তাই সেখানে জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় তারা সাংসদ সংখ্যার দিক থেকে পিছিয়ে পড়বে। অন্যদিকে উত্তর ভারতে জন্মহার অনেক বেশী। তাই এখানে আসন সংখ্যা বাড়বে আর এতে বিজেপি সুবিধা পাবে।
তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি বলেন, "উত্তর ভারত আমাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করবে। বিজেপি যদি জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন পুনর্বিন্যাস করে, তবে দক্ষিণ ভারত তার রাজনৈতিক কন্ঠ হারাবে।"
কেরালার মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নও কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেন, “আমাদের উপর আসন পুনর্বিন্যাসের খাঁড়া ঝুলছে। মোদী সরকার কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই নিজেদের মতো করে এই সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে, যা সাংবিধানিক বিধি এবং গণতন্ত্রের পরিপন্থী।”
এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার এই দাবি নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আসন পুনর্বিন্যাস ইস্যু আগামী নির্বাচনের অন্যতম বিতর্কিত বিষয় হতে চলেছে।
অন্যদিকে এই বৈঠক চলাকালীন বৈঠকস্থলের বাইরে কালো পোশাক পরে এবং কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, বিজেপি বিরোধীরা নিজেদের রাজ্য পরিচালনা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। সেই কারণে এই বৈঠক করছে। কেরালা এবং তেলেঙ্গানার বিরুদ্ধে বহু দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সত্য লুকিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন