
বৃহস্পতিবার মুসলিম সম্প্রদায়ের শীর্ষ ধর্মীয় নেতৃত্বের সাথে বৈঠক করলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS) প্রধান মোহন ভাগবত (Mohan Bhagwat)। জানা গেছে, বৈঠকের লক্ষ্য হল সম্প্রতি হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে তৈরি হওয়া একাধিক ‘ভুল ধারণা’। দুই ধর্মের নেতাদেরই দাবি, পারস্পরিক আলোচনার মধ্যেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
বৃহস্পতিবার দিল্লির হরিয়ানা ভবনে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার বৈঠক হয়। এই বৈঠকে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে নিয়মিত আলোচনা শুরুর প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে দুই পক্ষই একমত হয়েছেন।
বৈঠকটি আয়োজন করে দেশের বৃহত্তম ইমাম সংগঠন অল ইন্ডিয়া ইমাম অর্গানাইজেশন (AIIIO)। এর নেতৃত্বে রয়েছেন মৌলানা উমর আহমেদ ইলিয়াসি। তিনি বলেন, “জাতীয় ইস্যু, পারস্পরিক বিশ্বাস ও ঐক্যের উপর ভিত্তি করে আলোচনাটি গড়ে ওঠে। আলোচনাই একমাত্র পথ যা ভুল বোঝাবুঝি দূর করে, ঘৃণার অবসান ঘটায় এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলে।”
বৈঠকে প্রায় ৬০ জন বিশিষ্ট মুসলিম ধর্মগুরু, মুফতি এবং দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসার মোহতামিম (প্রধান) উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ছিলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরএসএসের সিনিয়র নেতা ড. কৃষ্ণ গোপাল, ইন্দ্রেশ কুমার ও অন্যান্যরা। বৈঠক শেষে আরএসএস-এর জাতীয় প্রচার ও গণমাধ্যম বিভাগের প্রধান সুনীল আম্বেকর জানান, “আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই সবাইকে নিয়ে। এই আলোচনা খুবই ইতিবাচক ছিল।”
বৈঠকে মূলত, মন্দির ও মসজিদের মধ্যে বোঝাপড়া ও সম্মান বৃদ্ধির উদ্যোগ, ইমাম ও পূজারীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও আলোচনা, মাদ্রাসা ও গুরুকুলের মধ্যে শিক্ষাগত ও সামাজিক সম্পর্ক গঠন, ধর্মীয় বক্তৃতা ও খুতবায় শান্তি ও ঐক্যের বার্তা ছড়ানোর আহ্বান এবং ঘৃণার রাজনীতি ও বিভাজনের বিরুদ্ধে যৌথ অবস্থান সম্পর্কে বিশেষ জোর দেওয়া হয়।
ইলিয়াসি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, ভারতীয় সমাজে যদি ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তবে তার পথ শুরু হয় মন্দির ও মসজিদ থেকে। সেখানে শান্তির বার্তা ছড়ালে জনগণের মনেও পরিবর্তন আসবে। মানুষ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা ও নির্দেশকে গুরুত্ব দেয়। তাই ইমামরা সম্প্রীতির বার্তা দেবেন, মাদ্রাসার পাঠ্যক্রমে শিক্ষার্থীদের ভ্রাতৃত্ববোধ শেখানো হবে।”
সমাজের বিভিন্ন মহলে এই বৈঠক ইতিবাচকভাবে গৃহীত হয়েছে। রাজনৈতিক ও বুদ্ধিজীবী মহল মনে করছে, এটি ভারতের বহুত্ববাদী সংস্কৃতিকে আরও দৃঢ় করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের সাম্প্রতিক সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই ধরণের আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী। এই ধরণের উদ্যোগ একদিকে যেমন সাম্প্রদায়িক বিভাজন হ্রাস করবে, অন্যদিকে গড়ে তুলবে এক শক্তিশালী জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন