
আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সাংবাদিক বৈঠক ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কে ভারতের কোনও ভূমিকা নেই বলেই জানালো নিউ দিল্লি। কেন্দ্রের দাবি, আফগান দূতাবাস ভারত সরকারের অধীনে নয়।
২০২১ সালে আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই সেদেশের মহিলাদের উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তালিবান সরকার। সম্প্রতি তারা আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে মহিলাদের লেখা বই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এর আগে মহিলাদের বাইরে বেরোনো, মহিলাদের উচ্চশিক্ষা, খেলাধুলা - এইসবের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল তালিবান সরকার।
দিল্লিতে মুত্তাকির সাংবাদিক বৈঠকে মহিলা সাংবাদিক প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। একাধিক সাংবাদিক বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। এই ঘটনা নিয়ে সরব হয় কংগ্রেস। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী কেন্দ্র সরকারকে কটাক্ষ করে নিজের সমাজমাধ্যমে লেখেন, "যখন আপনি একটি পাবলিক ফোরাম থেকে মহিলা সাংবাদিকদের বাদ দেওয়ার অনুমতি দেন, তখন আপনি ভারতের প্রতিটি মহিলাকে বার্তা দিচ্ছেন যে আপনি তাঁদের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ। আমাদের দেশে, মহিলাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমান অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে। এই ধরণের বৈষম্যের মুখে আপনার নীরবতা নারী শক্তির উপর আপনার স্লোগানের পরিপন্থী"।
সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন, ভারতের যোগ্য মহিলাদের অপমান আমাদের দেশে কীভাবে অনুমোদিত হচ্ছে? আমাদের দেশে নারীরা মেরুদণ্ড এবং গর্ব।
ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমও। তিনি বলেন, যখন সাংবাদিক সম্মেলনে মহিলা সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধ ছিল তখন পুরুষ সাংবাদিককদের উচিত ছিল বৈঠক বয়কট করা। আমি রীতিমতো হতবাক।
কেন্দ্র অবশ্য এই ঘটনায় তাদের কোনও ভূমিকা নেই বলেই দাবি করেছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, মুম্বাইতে আফগানিস্তানের কনসাল জেনারেলের নির্বাচিত সাংবাদিকদের কাছেই সাংবাদিক সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র গিয়েছিল। আফগান দূতাবাসের অঞ্চলটি ভারত সরকারের অধীনে নয়।
শুধু মহিলা সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধ নয়, আফগান পতাকা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়। এক আফগান তরুণ তালিবান পতাকা উত্তলোনের বিরোধিতা করেন। তাঁর দাবি, ভারত সরকার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দিক। তারপর সেই পতাকা উত্তোলন করা হবে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন আফগান বিদেশমন্ত্রী মুত্তাকি।
বৃহস্পতিবার ভারতে আসেন মুত্তাকি। শুক্রবার ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে বৈঠকও করেন তিনি। দুই দেশের মধ্যে একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনাও হয়। জয়শঙ্কর জানান, "ভারত আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতার প্রতি সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভারতের কারিগরি মিশনকে দূতাবাসের মর্যাদায় উন্নীত করার ঘোষণা করতে পেরে আমি আনন্দিত"।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন