ব্যাপক পুলিশি লাঠিচার্জের পরেও শুক্রবার চতুর্থ দিনে রাজস্থানের হনুমানগড়ে নির্মাণাধীন ইথানল প্ল্যান্টের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। গত চারদিন ধরে স্থানীয় মানুষ এই প্ল্যান্টের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। স্থানীয়দের বিক্ষোভের জেরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ায় ওই অঞ্চলে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ১০৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের নির্মম লাঠিচার্জের পর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সিপিআইএম।
সারা ভারত কৃষক সভার (AIKS) জেলা সাধারণ সম্পাদক মঙ্গেজ চৌধুরী জানিয়েছেন, পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদে আগামী ১৭ ডিসেম্বর জেলা কালেক্টরেট ঘেরাও করা হবে। তিনি আরও বলেন, পুলিশের অস্ত্রে মরচে ধরেছে, না হলে তারা বহু মানুষকে হত্যা করতো।
ঘটনা প্রসঙ্গে সিপিআইএম রাজস্থান রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিব্বি (হনুমানগড়) রানিখেদায় এশিয়ার বৃহত্তম ইথানল কারখানার বিরুদ্ধে প্রতিবাদরত কৃষকদের উপর বর্বরোচিত লাঠিচার্জের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে সিপিআইএম রাজস্থান।
বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, রাজস্থানের বিজেপি সরকার হনুমানগড় জেলার তিব্বি তহসিলের রানিখেদা গ্রামে পরিবেশ রক্ষায় এশিয়ার বৃহত্তম ইথানল কারখানা নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদরত কৃষকদের উপর বর্বরোচিত লাঠিচার্জ করে, যাতে ৫০ জন কৃষক গুরুতর আহত হন। আহতদের মধ্যে ছিলেন এআইকেএস এবং সিপিআইএমের নেতা কমরেড মঙ্গেজ চৌধুরী এবং কংগ্রেসের সাঙ্গারিয়ার বিধায়ক অভিমন্যু পুনিয়া, যারা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
প্রশাসনের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা ব্যর্থ হবার পর বুধবার দলে দলে কৃষক এসে প্রস্তাবিত ওই কারখানার পাঁচিল ভেঙে দেয়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করা হয়। সংবাদসংস্থার সূত্র অনুসারে, বিক্ষোভরত কৃষকরা কমপক্ষে ১৪টি গাড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
ইথানল কারখানা হটাও সংগ্রাম সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে গত ষোলো মাস ধরে এই কারখানার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছে। কিন্তু প্রশাসন আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করলে সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এই অঞ্চলের ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং বহু সংখ্যায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আন্দোলনের নেতা রভজোত সিং জানিয়েছেন, যতক্ষণ না এই কারখানা প্রত্যাহার করা হবে ততক্ষণ এই আন্দোলন চলবে।
ইথানল কারখানা প্রসঙ্গে স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, উর্বর জমিকে অনুর্বর ঘোষণা করে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তাদের আরও অভিযোগ, এই কারখানার দূষণের কারণে আশপাশের ৭০ বিঘার বেশি জমি ধ্বংস হয়ে যাবে।
বিক্ষোভকারী দলের নেতা জানিয়েছেন, এক লিটার ইথানল তৈরি করতে ৩ থেকে ১০ হাজার লিটার পানীয় জল খরচ হয়। এই ইথানল কারখানার জন্য প্রতিদিন ৬০ লক্ষ লিটার শুদ্ধ জলের প্রয়োজন হবে। যা এখানকার জল জমি জঙ্গল নষ্ট করে দেবে।
আজই আলোচনায় বসবে আন্দোলনকারীরা। জানা গেছে, বুধবারের সংঘর্ষের পর বিক্ষোভকারীরা টিব্বি গুরুদ্বারে আছেন। সেখানেই আন্দোলন কমিটির বৈঠক চলছে।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন