
ডিসেন্ট নোট বা ভিন্নমত জানানো সত্ত্বেও মাঝরাতে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে কংগ্রেস। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী।
আজ মঙ্গলবার মেয়াদ শেষ হচ্ছে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব নেবেন জ্ঞানেশ কুমার। ২০২৯ সালের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদ তাঁর। কার্যত মধ্যরাতে কেন্দ্রের তরফে এক বিবৃতিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে জ্ঞানেশ কুমারের নাম জানানো হয়। এইভাবে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন রাহুল গান্ধী।
নিজের এক্স হ্যান্ডেলে রাহুল গান্ধী লেখেন, 'পরবর্তী নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের জন্য গঠিত কমিটির বৈঠকের সময় আমি প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একটি নোট অফ ডিসেন্ট পেশ (ভিন্নমত) করেছিলাম। যেখানে বলা হয়েছে নির্বাহী হস্তক্ষেপমুক্ত এক স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে মৌলিক দিক হল নির্বাচন কমিশনার এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের প্রক্রিয়া'।
তিনি আরও লেখেন, 'সুপ্রিম কোর্টের আদেশ লঙ্ঘন করে এবং ভারতের প্রধান বিচারপতিকে কমিটি থেকে অপসারণ করে, মোদী সরকার আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অখণ্ডতা নিয়ে লক্ষ লক্ষ ভোটারের চিন্তা বাড়িয়েছে'।
পাশাপাশি রাহুল লেখেন, 'প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেভাবে মধ্যরাতে নতুন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা অসম্মানজনক। কমিটির গঠন এবং প্রক্রিয়াটি সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে এবং যখন আটচল্লিশ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে সেই সময় এমন সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া যায় না'।
প্রসঙ্গত, নয়া নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য সোমবার প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বৈঠকে বসেন। তারপর রাতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের নাম ঘোষণা করা হয়।
১৯৮৮ সালের কেরালা ব্যাচের আইএএস ছিলেন জ্ঞানেশ। কানপুর আইআইটি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিটেক করেন তিনি। পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ সংক্রান্ত অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন। কর্মজীবনে একাধিক প্রশাসনিক পদের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে কো-অপারেশন মন্ত্রকের সচিব ছিলেন তিনি। এছাড়াও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব পদেও দায়িত্ব সামলেছেন। তাঁর অধীনেই ২০২৭ সালে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, পুদুচেরি এবং তামিলনাড়ু-সহ ২০ টি বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে তাঁর মেয়াদের মধ্যে।
অন্যদিকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের নাম ঘোষণার পরেই এই বিষয়ে শীর্ষ আদালতে আবেদনকারীরা দ্রুততার সঙ্গে আগামীকাল (বুধবার) বিষয়টির শুনানির আবেদন জানিয়েছে। জানা গেছে, আগামীকাল এই শুনানি ৪১ নম্বর তালিকাভুক্ত আছে। যদিও এই মামলা আগামীকাল প্রথম শোনার জন্য বিচারপতি সূর্যকান্ত-র কাছে আবেদন জানিয়েছেন আইনজীবী প্রশান্তভূষণ।
অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস-এর আইনজীবী প্রশান্তভূষণ জানিয়েছেন, আগামীকাল এই মামলা ৪১ নম্বরে তালিকাভুক্ত আছে। আমি আবেদন জানিয়েছি যে, আমাদের দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য এই মামলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই মামলাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রথমে নিয়ে আসা হোক।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন