উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে জাতিগত বিদ্বেষের বলি হয়েছেন ত্রিপুরার যুবক অ্যাঞ্জেল চাকমা। ২৪ বছরের এমবিএ পড়ুয়া অ্যাঞ্জেল চাকমাকে ছুরি দিয়ে একাধিকবার কোপানো হয়েছে। এই ঘটনায় সরব হলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর মতে, বছরের পর বছর ধরে বিষাক্ত ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বিবৃতির মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে ঘৃণা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং বিজেপির ঘৃণাবর্ষণকারী নেতারা এটিকে নর্মালাইজ করে তুলছেন।
জানা গেছে, গত ৯ ডিসেম্বর দেরাদুনের সেলাকুই এলাকায় ছোট ভাই মাইকেল চাকমাকে নিয়ে বাজারে গিয়েছিলেন অ্যাঞ্জেল। সেখানেই একদল যুবক তাঁদের রাস্তা আটকে বর্ণবিদ্বেষী কটুক্তি করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এর প্রতিবাদ জানিয়ে অ্যাঞ্জেল ওই যুবকদের জানান, “আমরা চাইনিজ নই, ভারতীয়। প্রমাণ করতে কোন সার্টিফিকেট দেখাব আপনাদের?”
একথা শুনে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন ওই যুবকরা। অভিযোগ, এরপর গালাগালি দিতে দিতে দুই ভাইকে মারধর শুরু করেন তারা। এমনকি ছুরি বের করে পরপর কোপ মারা হয় দু’জনকে। অ্যাঞ্জেলের ঘাড়ে এবং মেরুদণ্ডে গুরুতর আঘাত লাগে। দেরাদুনের হাসপাতালে দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার মৃত্যু হয় তাঁর। ভাই মাইকেলের অবস্থাও সঙ্কটজনক।
শনিবার অ্যাঞ্জেলের দেহ আগরতলায় পাঠানো হয়েছে। এরপরই দোষীদের শাস্তি চেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে ত্রিপুরা সহ উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলি। টিপরা মথা পার্টির চেয়ারম্যান তথা ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ পরিবারের সদস্য প্রদ্যোত দেববর্মা বলেন, “উত্তর-পূর্ব ভারতের দেশপ্রেমিক মানুষদের চাইনিজ বলে ডাকা ও হামলা করা অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা এই বর্ণবিদ্বেষমূলক ভাষা ব্যবহার করে তারা জানে না, উত্তর-পূর্বের সাহসী মানুষদের জন্যই চীন এ দেশে ঢুকতে পারেনি। এ ধরণের ঘটনা শুধু পরিবার নয়, গোটা সমাজকেই বিভক্ত করে। বিভাজন আমাদের দুর্বল করে। আমরা তা চাই না। আমরা ন্যায়বিচার চাই।“
মাইকেলের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি এফআইআর দায়ের করেছে সেলাকুই থানার পুলিশ। ইতিমধ্যেই ২ নাবালক সহ মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মূল অভিযুক্ত যজ্ঞ অবস্থি এখনও পলাতক। অনুমান করা হচ্ছে, এই যুবক নেপাল পালিয়েছে। তাঁকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
অ্যাঞ্জেলের বাবা বিএসএফ-এ কর্মরত হেড কনস্টেবল। অনেকদিন ধরেই দেরাদুনে পড়াশোনা করছেন অ্যাঞ্জেল। তাঁর বন্ধুদের দাবি, শেষ কয়েকদিন অ্যাঞ্জেল বাঁচার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পুরোপুরি চেতনা পায়নি। এই ঘটনার প্রতিবাদে উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক কলেজে জাতিগত বিদ্বেষমূলক অপরাধের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। দেরাদুনেও একাধিক ছাত্র সংগঠন প্রতিবাদে সরব হয়েছে।
কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়ে লেখেন, “দেরাদুনে অ্যাঞ্জেল চাকমা এবং তাঁর ভাই মাইকেলের সাথে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত ভয়াবহ ঘৃণাজনিত অপরাধ। ঘৃণা রাতারাতি জন্ম নেয় না। বছরের পর বছর ধরে বিষাক্ত বিষয়বস্তু এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন বিবৃতির মাধ্যমে প্রতিদিন এটিকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে – বিশেষ করে আমাদের তরুণদের মধ্যে। আর ক্ষমতাসীন বিজেপির ঘৃণাবর্ষণকারী নেতারা এটিকে নর্মালাইজ করে তুলছেন।“
তিনি আরও লেখেন, “ভারত শ্রদ্ধা ও ঐক্যের উপর প্রতিষ্ঠিত, ভয় ও গালাগালির উপর নয়। আমাদের দেশ ভালোবাসা ও বৈচিত্র্যের দেশ। আমরা এমন একটি মৃত সমাজে পরিণত হতে পারি না, যেখানে সহনাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা হলেও মুখ ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আমরা আমাদের দেশকে কীসে পরিণত করছি, তা নিয়ে আমাদের অবশ্যই ভাবতে হবে এবং এর মোকাবিলা করতে হবে। ত্রিপুরা ও উত্তর-পূর্বের মানুষদের আমাদের ভারতীয় ভাই ও বোন বলতে পেরে আমরা গর্বিত।“
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন