
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের (DU) স্নাতক স্তরের ইতিহাস (সাম্মানিক) সিলেবাসে প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থ ‘মনুস্মৃতি’ এবং মুঘল সম্রাট বাবরের আত্মজীবনী ‘বাবরনামা’ অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত ঘিরে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যোগেশ সিং স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করা হবে এবং অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের (AC) সভায় উপস্থাপন করা হবে না।
মঙ্গলবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, যোগেশ সিং জানিয়েছেন, "আমি উপাচার্য হিসেবে আমার জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করতে যাচ্ছি এবং অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে (AC) এটি উপস্থাপন করতে দেব না। আমরা এই প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করব এবং বিকল্প বিষয়বস্তু নিয়ে ভাবব।"
প্রসঙ্গত, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের যৌথ কোর্স কমিটি সিলেবাসে মনুস্মৃতি এবং বাবরনামা অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল। তবে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল এবং এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল এখনও এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেনি।
যোগেশ সিং বলেন, "আমরা জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP) ২০২০ অনুসরণ করে বিকশিত ভারতের জন্য কাজ করছি। এটি একবিংশ শতাব্দী এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই ধরনের পুরনো দিনের বিষয় পড়বে না"।
তবে, ইতিহাস বিভাগের কিছু অনুষদ সদস্য (Faculty Members) যাঁদের মধ্যে কোর্স কমিটির সদস্যরাও রয়েছেন, তাঁরা মনুস্মৃতি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন যে বর্ণ ও লিঙ্গ বৈষম্য বোঝার জন্য এটি অপরিহার্য।
একজন অনুষদ সদস্য দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "মনুস্মৃতি না পড়লে কেউ কীভাবে বর্ণ ও বৈষম্য বুঝতে পারবে? অসমতা ও বৈষম্য বোঝার জন্য, নিজেকে শিক্ষিত করতে হবে।"
আরেকজন অনুষদ সদস্য বলেন, "ইতিহাস হল উৎসের সাহায্যে ফিরে যাওয়া। মনুস্মৃতি সর্বদা প্রাচীন ইতিহাস পাঠ্যক্রমের একটি অংশ ছিল। মনুস্মৃতি না বুঝে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস পড়ানো যায় না।”
উল্লেখ্য, এর আগেও ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের পাঠ্যক্রমে ‘মনুস্মৃতি’ অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হলে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সেই সময়ও উপাচার্য যোগেশ সিং একই অবস্থান নিয়েছিলেন এবং অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে উপস্থাপনের আগেই প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে নেন।
গত বছর, বিতর্কের পর আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক অঞ্জু ভালি টিকু বলেছিলেন, "জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP) ২০২০-র নির্দেশিকা অনুযায়ী শিক্ষায় ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি যুক্ত করার জন্য ‘মনুস্মৃতি’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এটি একটি বিশ্লেষণমূলক ইউনিটের অংশ, যেখানে শিক্ষার্থীদের তুলনামূলকভাবে বিচার বিশ্লেষণ শেখানোর জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল"।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন