
গোষ্ঠী সংঘর্ষ হওয়ার পর থেকে এই প্রথম মণিপুর সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর সফরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে কুকি ও মেইতেই জনগোষ্ঠীর মানুষরা। একাধিক দাবি রয়েছে তাঁদের। তবে প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে দুই শিবিরের
কুকি শিবির প্রধানমন্ত্রীর সফরকে স্বাগত জানিয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কুকি জঙ্গিগোষ্ঠীর মধ্যে নতুন করে স্বাক্ষরিত সাসপেনশন অফ অপারেশনস (SoO) চুক্তিকে তাঁরা ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেছে। কুকি কাউন্সিল তাদের দীর্ঘদিনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলেছে, মণিপুর থেকে পৃথক হয়ে অনুচ্ছেদ ২৩৯এ অনুযায়ী নিজেদের বিধানসভাসহ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করা ছাড়া তাদের কাছে আর কোনো পথ খোলা নেই।
তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, “২৫০-র বেশি নিরপরাধ মানুষ নিহত হয়েছেন, ৩৬০টিরও বেশি গির্জা ও উপাসনালয় ধ্বংস হয়েছে, ৭,০০০-র বেশি বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আজও ৪০,০০০-রও বেশি মানুষ শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত। এই অবস্থায় শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আলাদা প্রশাসন অপরিহার্য।”
প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষ্যে কুকি সংগঠনগুলি জাতীয় সড়ক ২-এর অবরোধ তুলে নিয়েছে, যাতে যাতায়াত ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহনে সুবিধা হয়।
অন্যদিকে, মেইতৈ সংগঠনগুলি এই দাবিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। কোঅর্ডিনেটিং কমিটি অন মণিপুর ইন্টেগ্রিটি (COCOMI)-র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কুকিদের আলাদা প্রশাসনের দাবি “জাতিগতকরণের” শামিল, যা মণিপুরের বিভাজনকে আরও ত্বরান্বিত করবে।
COCOMI-র দাবি, রাজ্যে অবিলম্বে NRC-র মতো প্রক্রিয়া চালু করে বেআইনি অভিবাসীদের শনাক্ত করতে হবে। তাদের বক্তব্য, “অস্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধিই মণিপুরের সামাজিক ও রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করেছে। NRC-ই সমস্যার মূল সমাধান।”
প্রধানমন্ত্রীর সফরকে তাঁরা স্বাগত জানালেও সতর্ক করেছেন, এই সফর যেন কোনোভাবেই একপক্ষীয় না হয় এবং টোকেন প্রদর্শনীতে সীমাবদ্ধ না থাকে।
২০২৩ সালের মে মাস থেকে গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত মণিপুর। কুকি ও মেইতেই জনজাতির সশস্ত্র সংঘর্ষের জেরে গত ২ বছর ২৫০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ঘরছাড়া প্রায় ৫৭,০০০ জন। তাঁদের বেশিরভাগ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রথম মণিপুর যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
মণিপুরের ইম্ফল ও চরাচাঁদপুরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। আইজল থেকে মণিপুর যাবেন নরেন্দ্র মোদী। প্রথমে যাবেন চুরাচাঁদপুরে। সেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। চুরাচাঁদপুরে একটি প্রকল্প উদ্বোধন করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। তারপর যাবেন ইম্ফলে।
মণিপুরের মুখ্যসচিব জানান, শনিবার প্রধানমন্ত্রী ৭,৩০০ কোটি টাকার প্রকল্পের শিলান্যাস করার পাশাপাশি ১,২০০ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।
রাষ্ট্রপতির শাসনে থাকা মণিপুরে মোদির এই সফরকে কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য এক বড় পরীক্ষা হিসাবে দেখা হচ্ছে। একদিকে কুকিদের পৃথকীকরণের দাবি, অন্যদিকে মেইতৈদের অখণ্ডতার জোরালো আহ্বান। এখন দেখার প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর কতটা শান্ত থাকে মণিপুর?
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন