বাংলাদেশী সন্দেহে উত্তরপ্রদেশে আটক মুর্শিদাবাদের ১৮ ফেরিওয়ালা! মুখ্যমন্ত্রীর কাছে উদ্ধারের আর্জি

People's Reporter: বহরমপুর থানা এলাকার ১৮ জন যুবক উত্তরপ্রদেশের বস্তি জেলায় গিয়েছিলেন কাজের জন্য। তাঁরা সকলেই ঘুরে ঘুরে শিশুদের প্লাস্টিকের খেলনা ও গৃহস্থালির সরঞ্জাম বিক্রি করতেন।
বাংলাদেশী সন্দেহে উত্তরপ্রদেশে আটক মুর্শিদাবাদের ১৮ ফেরিওয়ালা! মুখ্যমন্ত্রীর কাছে উদ্ধারের আর্জি
প্রতীকী ছবি
Published on

বাংলাদেশী সন্দেহে ফের ভিনরাজ্যে আক্রান্ত মুর্শিদাবাদের বেশ কয়েকজন যুবক। এবার উত্তরপ্রদেশে ১৮ জন বাঙালি ফেরিওয়ালা হেনস্থার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ। আটক করা হয়েছে তাঁদের। বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন ওই ফেরিওয়ালারা। তাঁদের পরিবারের সদস্যেরা ইতিমধ্যেই প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন।

জানা গেছে, বহরমপুর থানা এলাকার ১৮ জন যুবক উত্তরপ্রদেশের বস্তি জেলায় গিয়েছিলেন কাজের জন্য। তাঁরা সকলেই ঘুরে ঘুরে শিশুদের প্লাস্টিকের খেলনা ও গৃহস্থালির সরঞ্জাম বিক্রি করতেন। নগর এলাকায় একটি ভাড়াবাড়িতে থাকতেন তাঁরা। অভিযোগ, শুক্রবার রাতে আচমকাই পুলিশ হানা দেয় সেই বাড়িতে। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড দেখার পরেও তাঁদের আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকি থানায় ওই ফেরিওয়ালাদের নিজেদের রান্না নিজেদেরই করে খেতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এই ঘটনার পর থানায় যান বাড়ির মালিক। অভিযোগ, ওই ১৮ জনকে মুক্তির জন্য মালিকের থেকে টাকা দাবি করা হয়। এরপরেই ভাড়াবাড়ির মালিক ফেরিওয়ালাদের বাড়িতে খবর দেন।

মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালবাগ) রাসপ্রীত সিংহ বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মুক্ত করার চেষ্টা চলছে।’’

অন্যদিকে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন আটকরা। ফোন কেড়ে নেওয়া হলেও একজন তার অ‌্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনটি লুকিয়ে রাখেন। সেখান থেকেই ভিডিও করে আর্জি জানান। আটক রয়েছেন শক্তিপুর থানার হালসানা পাড়ার ফেরিওয়ালা ফজল শেখ। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বৈধ আধার কার্ড, ভোটার কার্ড এমনকী প্যান কার্ড দেখানো সত্ত্বেও আমাদের আটকে রাখা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ বলছে আমরা নাকি বাংলাদেশি! অথচ আমরা ভারতীয়। গত তিনদিন ধরে আমাদের শুধু শুধু আটকে রেখেছে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ।’’

বহরমপুর থানার রাঙামাটি চাঁদপাড়া এলাকার আরশেদ শেখ বলেন, ‘‘আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে উত্তরপ্রদেশের নানা প্রান্তে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাথার চুল কিনে থাকি। হঠাৎ করে আমরা বাংলাদেশি হয়ে গেলাম! আমাদের কিছুতেই ছাড়া হচ্ছে না। নিজেদেরই রান্না করে খেতে হচ্ছে। ঠিকমতো দু’বেলা খাবার জুটছে না।’’

সাটুই এলাকার বাসিন্দা মহসিন শেখ বলেন, ‘‘১৮ জনের মধ্যে আমাদের ৫ জনকে দু’ঘণ্টার জন্য রান্না করতে বলা হচ্ছে। আমরা কষ্ট করে ভাত, তরকারি রান্না করছি। এভাবে কতদিন আটকে থাকব জানি না।’’

শক্তিপুর থানার সাগর শেখ বাথরুমে লুকিয়ে মোবাইল থেকে নিজের ভিডিও তুলে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। ভারতের নাগরিক। আমাদের সমস্ত বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও আটকে রেখেছে। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের বাঁচান।’’

পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্যমঞ্চের রাজ্য সম্পাদক আসিফ ফারুক বলেন, ‘‘ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে ১৮ জন ফেরিওয়ালাকে আটকে রেখেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। বিষয়টি মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সুপার, জেলাশাসক এবং শ্রমদপ্তরের আধিকারিককে জানানো হয়েছে। ওই ফেরিওয়ালাদের নিঃশর্তে মুক্তির আবেদন করছি।"

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in