

পরিবেশবিদদের সতর্কবার্তা কার্যত উড়িয়েই কেন-বেতোয়া নদী সংযুক্তিকরণ প্রকল্পের শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যা নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।
বুধবার মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহোতে নদী সংযুক্তিকরণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন নরেন্দ্র মোদী। অমিত শাহের 'আম্বেদকর ইজ দ্য ফ্যাশন' মন্তব্য নিয়ে বিতর্কের জেরে দলের যে ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে, তা মেরামতির উদ্দেশ্যে উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে মোদী দাবি করেন, 'স্বাধীনতার পর দেশের জলসম্পদ উন্নয়নের ধারণার প্রথম প্রস্তাব দিয়েছিলেন ডঃ বি. আর. আম্বেদকর। দেশের জলসম্পদ শক্তিশালী করে তোলা অম্বেডকরের স্বপ্ন ছিল। কিন্তু এর যথাযথ স্বীকৃতি দেয়নি কংগ্রেস।' প্রকল্প উদ্বোধনে গিয়ে আম্বেদকর নিয়ে কংগ্রেসকে খোঁচা দেওয়া নিয়েও রাজনৈতিক পারদ তুঙ্গে।
প্রসঙ্গত, কেন-বেতোয়া নদী সংযুক্তিকরণ প্রকল্পটির পরিকল্পনা নেওয়া হয় ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে। পরিবেশবিদরা তখনই সরকারকে সচেতন করেছিলেন। পরে ইউপিএ সরকারের আমলে সেই প্রকল্প হিমঘরে চলে যায়।
পরিবেশবিদদের মতে, এই প্রকল্পের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পান্না ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্তর্গত প্রায় ৪০ শতাংশ বনাঞ্চল জলের তলায় চলে যাবে। ২০২১ সালে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে এই প্রকল্প বন্ধ করার অনুরোধ জানান। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ২০২২ সালের বাজেটে এই প্রকল্প পুনরায় চালু করার প্রস্তাব দেন।
কেন্ এবং বেতোয়া দু’টিই যমুনার উপনদী। বৃষ্টির জলে পুষ্ট হওয়ায় বছরের অন্য সময় জল থাকে না দুই নদীতে। সারা বছর জল ধরে রাখতে এই প্রকল্পের অধীনে কেন নদীর উপর একটি ৭৪ মিটার উঁচু বাঁধ তৈরির পাশাপাশি দুই নদীর সংযোগের জন্য ২২১ কিমি দীর্ঘ খাল কাটা হবে। এর ফলে বছরে মধ্যপ্রদেশের ৮.১১ লক্ষ হেক্টর এবং উত্তরপ্রদেশের ২.৫১ লক্ষ হেক্টর জমি সেচের জল পাবে। এছাড়াও প্রায় ৬২ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে পানীয় জল। প্রায় ৮ বছর সময় লাগবে পুরো প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হতে। খরচ হবে আনুমানিক ৪৪ হাজার কোটি টাকা।
তবে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই প্রকল্পের শিলান্যাসের সময় অমিত শাহের সংসদে আম্বেদকর সংক্রান্ত মন্তব্য এবং শিলান্যাসের দিন হিসেবে বাজপেয়ীর জন্মদিবসকে বেছে নেওয়া নিয়ে বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে।
বিরোধীদের মতে, বিজেপি নিজেদের দলীয় প্রচারের জন্য ইতিহাসকে বিকৃত করছে। অন্যদিকে, পরিবেশবিদদের মতে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিবেশগত প্রভাবের বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছে। যা ভবিষ্যতে গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন