বিহারের আমৌর (Amour) বিধানসভা কেন্দ্রে আচমকাই প্রার্থী বদল করল নীতিশ কুমারের জেডিইউ (JDU)। দু’দিন আগেই এই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছিল ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী সাবা জাফরকে। যদিও গতকাল এক বিবৃতি দিয়ে জেডিইউ জানায় এই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হচ্ছে প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ সাবির আলিকে। যিনি ১১ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সুখ্যাতি করায় জেডিইউ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন।
কে এই সাবির আলি?
বিহারের দলবদলের রাজনীতিতে একাধিক বার দলবদল করেছেন সাবির আলি। প্রথমবার রামবিলাস পাসোয়ানের এলজেপি থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হবার পর দ্বিতীয়বার তিনি জেডিইউ-র মনোনয়নে সাংসদ হন। এরপর ২০১৪ সালে জেডিইউ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করেন নীতিশ কুমার। অভিযোগ ছিল, তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গুণগান গেয়েছেন।
জেডিইউ থেকে ২০১৪ সালে সাবির আলির বহিষ্কারের ঘোষণার পরেই তাঁর সমর্থকরা দিল্লিতে জেডিইউ-র অফিসে ভাঙচুর চালায় এবং নীতিশ কুমারের হোরডিং নামিয়ে দেয়। এই ঘটনার সময় সাবির আলি জেডিইউ দিল্লি শাখার সভাপতি ছিলেন। সেই সময়ের জেডিইউ সভাপতি শারদ যাদব জানিয়েছিলেন, আমরা প্রথম থেকেই জানতাম সাবির আলি ভালো লোক নন। এটা ভালোই হল যে তাঁকে বহিষ্কারের পরেই তাঁর প্রকৃত চেহারা সামনে এল।
জেডিইউ থেকে বহিষ্কৃত হবার পরেই ২০১৪ সালেই সাবির আলি যোগ দেন বিজেপিতে। যদিও যোগদান করার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই বিজেপি তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর ইয়াসিন ভাটকলের সঙ্গে যোগাযোগের। যদিও আলি সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। বিজেপির সহ-সভাপতি মুখতার আব্বাস নকভি আলির অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করার পর এবং আরএসএসও তার বিরোধিতা প্রকাশ করার পর, দলীয় সভাপতি রাজনাথ সিং বিতর্কিত নেতার সদস্যপদ বাতিল করেন।
এর কিছুদিন ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই ফের তাঁকে বিজেপিতে ফিরিয়ে নেওয়া হয় এবং পরবর্তী সময়ে তাঁকে সংখ্যালঘু সেলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
সাবির আলির জেডিইউতে যোগ
গতকাল ১৮ অক্টোবর আবারও জেডিইউ-তে যোগ দিয়েছেন সাবির আলি এবং তাঁকে প্রার্থী করার কথা ঘোষণা করেছে জেডিইউ। যদিও সাবির আলির জেডিইউ-তে ফেরা নিয়ে জেডিইউ এবং বিজেপি শিবিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিশেষ করে ঘোষিত প্রার্থীকে সরিয়ে তাঁকে পূর্ণিয়া জেলার আমৌর কেন্দ্রে প্রার্থী করায় ক্ষুব্ধ কিছু অংশের মানুষ। জেডিইউ-র এই সিদ্ধান্তের ফলে সীমাঞ্চলে এনডিএ জোটের ফলাফলে প্রভাব পড়তে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
সাবির আলিকে জেডিইউ-তে ফেরানোর পর বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন এর ফলে পূর্ণিয়া জেলায় ভোটের সমীকরণ বদলে যেতে পারে। যা এনডিএ-র পক্ষে ভালো হবে না।
আমৌর বিধানসভা কেন্দ্র
২০১০ সালে আমৌর কেন্দ্র থেকে জেডিইউ প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন সাবা জাফর। ২০১৫ সালে তিনি বিজেপি প্রার্থী হিসেবে ওই কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। ২০২০ বিধানসভা নির্বাচনে আবার জেডিইউ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসাদুদ্দিন ওয়েইসির দলের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী তালিকায় সাবা জাফরকেই এই কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিল জেডিইউ। যদিও গতকাল সেই সিদ্ধান্ত বদল করে প্রার্থী করা হয়েছে সাবির আলিকে। এই ঘোষণার পরে এখনও পর্যন্ত সাবা জাফরের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন