
* বুধবার রাতে কোনও ঘোষণা ছাড়াই শম্ভু ও খানৌরি সীমান্ত থেকে আন্দোলনরত কৃষকদের বলপূর্বক সরানো শুরু করে পুলিশ।
* ব্যাপক লাঠিচার্জ করা হয়, টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটানো হয়, বুলডোজার দিয়ে কৃষকদের অস্থায়ী আশ্রয় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
* লোকসভা প্রাঙ্গনে পুলিশি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন কংগ্রেস সাংসদরা।
* বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী ডেপুটি কমিশনারদের অফিসের বাইরে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা (অরাজনৈতিক) এবং কিষাণ মজদুর মোর্চা।
পুলিশের সাথে কৃষকদের সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠলো শম্ভু ও খানৌরি সীমান্ত। দুই সীমান্ত থেকে প্রায় ৭০০ জন কৃষককে আটক করেছে পাঞ্জাব পুলিশ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় একাধিক জায়গায় ইন্টারনেট বন্ধ রাখার খবরও সামনে আসছে।
নিজেদের একাধিক দাবি নিয়ে গত বছর দিল্লি চলোর ডাক দিয়েছিল কৃষক সংগঠনগুলি। কিন্তু হরিয়ানা পুলিশ দিল্লি ঢুকতে বাধা দেওয়ায় পাঞ্জাব ও হরিয়ানা সীমান্তেই অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন কৃষকরা। সীমান্তেই আন্দোলন চালাচ্ছিলেন তাঁরা। অভিযোগ, বুধবার রাতে কোনও পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই তাঁদের বলপূর্বক সরানো শুরু করে পুলিশ। সেই সময় নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সীমান্ত থেকে অবস্থান তুলে দেওয়ার জন্য বিশাল পুলিশ বাহিনী পাঠানো হয়। ব্যাপক লাঠিচার্জের পাশাপাশি টিয়ার গ্যাসের শেলও ফাটানো হয়। বহু কৃষককে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। বুলডোজার দিয়ে কৃষকদের অস্থায়ী আশ্রয় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
পুলিশের এক আধিকারিক জানান, বহুবার আবেদন করার পরেও কৃষকরা রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করছিলেন। সাধারণ মানুষের অসুবিধা হচ্ছিল। বাধ্য হয়েই বলপ্রয়োগ করতে হয়েছে।
কৃষক সংগঠন সূত্রে খবর, ৫০০ থেকে ৭০০ জন কৃষককে আটক করা হয়েছে। কৃষক নেতা জগজিৎ সিং ডালেওয়াল এবং কিষাণ মজদুর মোর্চার প্রধান সর্বান সিং পান্ধের সহ একাধিক কৃষক নেতাকেও আটক করেছে পাঞ্জাব পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যা থেকেই পাতিয়ালা এবং আশেপাশের শহরগুলিতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।
পুলিশের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করেছেন পাঞ্জাবের কংগ্রেস সাংসদরা। বৃহস্পতিবার লোকসভা প্রাঙ্গনে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন তাঁরা। সাংসদ তথা পাঞ্জাব কংগ্রেস সভাপতি অমরিন্দর সিং রাজা ওয়ারিং বলেন, "কৃষকদের উপর যেভাবে অত্যাচার করা হয়েছে, আমি তার নিন্দা জানাই। যেসব সরকার আগে বলত আমরা কৃষকদের শুভাকাঙ্ক্ষী, তাদের আসল চেহারা ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে।"
প্রতিবাদরত কংগ্রেস সাংসদদের সাথে দেখা করেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী।
অন্যদিকে পুলিশের লাঠিচার্জের তীব্র নিন্দা করেছে কৃষক সংগঠনগুলিও। সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা (অরাজনৈতিক) এবং কিষাণ মজদুর মোর্চা বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী ডেপুটি কমিশনারদের অফিসের বাইরে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। আজ দুপুরে বৈঠকে বসতে পারেন কৃষক নেতারা। এছাড়া পাঞ্জাবজুড়ে 'চাক্কা জ্যামের' ডাক দিয়েছেন বেশ কয়েকজন কৃষক নেতা।
পাঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী হরপাল সিং চীমা বলেন, 'রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের এই বিক্ষোভ পাঞ্জাবের অর্থনীতির ক্ষতি করছিল। আম আদমি পার্টি প্রথম দিন থেকেই কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন করেছে। কৃষকদের জন্য অনেক কাজও করেছে আপ সরকার। কিন্তু রাস্তা বন্ধ করে বা অবরোধ করে এইভাবে বিক্ষোভ দেখানো যায় না। জাতীয় সড়কে এমন অবস্থান মেনে নেওয়া যায় না'।
অন্যদিকে, হরিয়ানা পুলিশ কৃষক নেতা জসমিত সিং এবং তেজবীর সিং-র বাড়িতে নোটিশ পাঠিয়েছে। তাঁদের তদন্তকারী দলের সামনে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার হাজিরা না দিলে দুই কৃষক নেতার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে চিঠিতে। গত বছর দায়ের করা একটি মামলার ভিত্তিতেই এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন