
ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR)-এর বিরোধিতায় সোমবার বিরোধী সাংসদদের নির্বাচন সদন অভিযান ঘিরে ধুন্ধমার রাজধানী দিল্লি। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিরোধীদের জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দফতর ঘেরাও কর্মসূচি ব্যারিকেড দিয়ে আটকায় দিল্লি পুলিশ। রাস্তায় বসে অবস্থান শুরু করেন রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা, অখিলেশ যাদব সহ বিরোধী সাংসদেরা। অবস্থান তুলতে সাংসদদের আটক করা শুরু করে দিল্লি পুলিশ। আটক করে বাসে তোলা হয় রাহুল, প্রিয়াঙ্কা সহ বিরোধী সাংসদদের।
চলতি বছরের শেষেই বিহার বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, আসাম, তামিলনাড়ুতে বিধানসভা নির্বাচন। বিরোধীদের অভিযোগ, এসআইআর-এর কারণে বিহারের ভোটার তালিকা থেকে ৬৫ লক্ষ নাম বাদ পড়েছে। নির্বাচনে বিজেপিকে সুবিধা করে দিতেই কমিশন বিজেপির হয়ে কাজ করছে বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা।
অন্যদিকে, গত সপ্তাহেই 'ভোট চুরি' হচ্ছে বলে দাবি করেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁর দাবির সপক্ষে একাধিক পরিসংখ্যানও তিনি তুলে ধরেছেন। সংসদের অধিবেশনে বার বার এসআইআর নিয়ে আলোচনার দাবি এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর তোলা 'ভোট চুরি'র অভিযোগ ঘিরে এখন সরগরম রাজনৈতিক মহল।
এই আবহে সোমবার দিল্লির জাতীয় নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেয় বিরোধী দলগুলি। কংগ্রেস, শিবসেনা (ইউবিটি), সমাজবাদী পার্টি, এনসিপি (শরদ পাওয়ার), বাম, তৃণমূল সাংসদেরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। ইন্ডিয়া মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যাবার কথা ঘোষণা করলেও আজকের অভিযানে শামিল হয়েছে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টিও।
বাংলা ভাষা ও বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণের অভিযোগের আবহে কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিতেও ভাষার বৈচিত্র্য তুলে ধরতে চেয়েছিলেন বিরোধীরা। এদিনের অভিযানে বিভিন্ন ভাষায় প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে বিরোধী সাংসদদের হাতে।
যদিও রবিবারই দিল্লি পুলিশের তরফে জানানো হয়ছিল বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-র তরফে সংসদ ভবন থেকে কমিশনের দফতর পর্যন্ত মিছিল করে যাওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়নি। যা নিয়ে সমাজবাদী পার্টির সাংসদ রামগোপাল যাদব বলেন, "দিল্লির রাস্তায় হাঁটার জন্য সাংসদদের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। সাংসদদের রাস্তায় নামা যদি সত্যিই ঝুঁকির কারণ হয়ে থাকে, তা হলে এই প্রশাসনিক ব্যবস্থা থাকাই তো অর্থহীন"।
সোমবার সকালে লোকসভা এবং রাজ্যসভার অধিবেশন শুরু হতেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিরোধীরা। যার জেরে সংসদের দুই কক্ষের অধিবেশনই মুলতবি করে দেওয়া হয়েছে দুপুর ২ টো পর্যন্ত। এরপরেই সংসদের নতুন ভবনের মকর দ্বারের সামনে জড়ো হন বিরোধী সাংসদেরা।
সংসদ ভবন থেকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা, রাহুল গান্ধী, অখিলেশ যাদব, ডেরেক ও ব্রায়েনরা মিছিল শুরু করতেই ব্যারিকেড দিয়ে আটকায় দিল্লি পুলিশ। এরপর প্রায় ৩০০ জন সাংসদ সেখানেই বসে পড়েন অবস্থানে। ‘মোদী সরকার হায় হায়’ স্লোগান দিতে দেখা যায় মহুয়া মৈত্র, সাগরিকা ঘোষ, সুস্মিতা দেবদের। বিভিন্ন ভাষায় স্লোগান দেওয়া হয়। দেখা যায় দেশের বিভিন্ন ভাষায় লেখা পোস্টারও। প্রতিটি পোস্টারেই কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। চেয়ারে বসে বিক্ষোভ দেখান প্রবীণ সাংসদ শরদ পাওয়ার, মল্লিকার্জুন খাড়গের মত বর্ষীয়ান বিরোধী সাংসদরা। এরপরেই অবস্থান তুলতে ধড়পাকড় শুরু করে দিল্লি পুলিশ। গাড়িতে তোলা হয় রাহুল, প্রিয়াঙ্কা, মহুয়া-সহ অন্য সাংসদদের।
এদিন রাহুল গান্ধী আটক অবস্থাতেই পুলিশ ভ্যান থেকে সাংবাদিকদের বলেন, এটা সংবিধান বাঁচানোর লড়াই। স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রকাশের দাবি জানান তিনি। জানা গেছে, পুলিশ আটক করে বাসে তোলার পরেই ধস্তাধস্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন মহুয়া মৈত্র, আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ মিতালি বাগ। অসুস্থ হয়ে পড়েন এসপির এক সাংসদও। বাস থেকে নেমে এসপির অসুস্থ সাংসদকে অন্য গাড়িতে তুলে দেন রাহুল গান্ধী।
সোমবারে বিরোধীদের কমিশন ভবন অভিযান কর্মসূচিতে রাহুল গান্ধী তথা বিরোধীদের হয়ে সুর চড়ান কেরালার তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন রাহুল গান্ধীর তোলা জরুরী প্রশ্নের উত্তর দেবে না নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং মানুষের মনে দেখা দেওয়া ধন্দগুলি কাটাতে উত্তর দেওয়া উচিত। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক বার নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর সরকারের প্রশংসা শোনা গেলেও এদিন থারুর সরাসরি তাঁর দলের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন