নতুন লেবার কোডকে ‘প্রতারণামূলক’ বলে অভিহিত করলো দেশের বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ মঞ্চ। শুক্রবার মুম্বাইতে দেশের প্রধান দশটি শ্রমিক সংগঠন নয়া লেবার কোডের বিরোধিতা করে একে বিগত কয়েক দশকের মধ্যে শ্রমিকদের সঙ্গে সবথেকে বড়ো ‘প্রতারণা’ বলে জানিয়েছে। ইউনিয়নগুলির পক্ষ থেকে অবিলম্বে এই শ্রম কোড প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।
আগামী বুধবার ২৬ নভেম্বর এই শ্রমকোডের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ সেন্ট্রাল ট্রেড ইউনিয়নস। এই বিক্ষোভে যোগ দেবে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চাও (SKM)। ওইদিন সমস্ত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের কালো ব্যাজ পরে বিক্ষোভে শামিল হবার আহ্বান জানানো হয়েছে।
নতুন এই শ্রমকোডে একাধিক পরস্পরবিরোধী বিষয় আছে বলে অভিমত বিভিন্ন মহলের। এই শ্রম কোডে একদিকে যেমন শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা বা ন্যূনতম মজুরির বিষয়টি রাখা হয়েছে অন্যদিকে এই বিধি অনুসারে যে কোনও সংস্থা অনেক সহজে তাদের কর্মীদের বরখাস্ত বা ছাঁটাই করতে পারবে।
গত বছরের জুন মাস থেকে নতুন শ্রম কোড নিয়ে ইউনিয়নগুলির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয় কেন্দ্রীয় সরকারের। যদিও সেইসব বৈঠকে শ্রমিক ইউনিয়নগুলির আপত্তির কথা অগ্রাহ্য করেই এই শ্রম কোড চালু করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ইউনিয়নের দাবিগুলির বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনও উত্তর দেওয়া হয়নি বলেও দাবি করা হয়েছে।
সিআইটিইউ-র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন জানিয়েছেন, গত ১৩ নভেম্বর তারিখে ‘শ্রম শক্তি নীতি ২০২৫’ নিয়ে বৈঠক হয়েছিল। যেখানে ট্রেড ইউনিয়নগুলির যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছিল শ্রমকোড বলবৎ না করার। তার বদলে ইন্ডিয়ান লেবার কনফারেন্সে (ILC) এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হক। ২০১৫ সালের পর থেকে গত দশ বছর ধরে এই আলোচনা হয়নি। এমনকি গত ২০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে বাজেট পূর্ববর্তী আলোচনাতেও ট্রেড ইউনিয়ন মঞ্চের পক্ষ থেকে এই শ্রম কোড সম্পূর্ণ বাতিল করার আবেদন জানানো হয়েছিল। যদিও কেন্দ্রের সরকার ফ্যাসিবাদি মনোভাব নিয়ে চলছে।
বেশ কিছুদিন আগেই নতুন এই চার শ্রমকোড সংক্রান্ত বিল সংসদে পাশ হলেও শুক্রবার থেকে এই চার শ্রমকোড কার্যকর করার কথা ঘোষণা করা হয়। চারটি শ্রম কোড বিলের মধ্যে ২০১৯ সালে একটি এবং ২০২০ সালে বাকি তিনটি বিল পাশ হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নতুন এই চার শ্রম কোডকে দেশের শ্রম আইনের ইতিহাসে সব থেকে বড়ো সংস্কার বলে দাবি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, এটি স্বাধীনতার পর থেকে সবথেকে ব্যাপক এবং প্রগতিশীল শ্রম ভিত্তিক সংস্কার। এতে দেশের শ্রমিকদের ক্ষমতা আরও বাড়বে। যদিও প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত নয় বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন।
এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রের এনডিএ তথা বিজেপি সরকারের দাবি শ্রমক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য এই নয়া শ্রমকোড চালু করা হচ্ছে। তাই পুরোনো ৪৪টি কেন্দ্রীয় শ্রম আইনের মধ্যে বর্তমান সময়ে অপ্রাসঙ্গিক জানিয়ে ১৫টিকে বাতিল করে দেওয়া হয়। বাকি ২৯টি শ্রম আইনকে চার শ্রম কোডের মধ্যে নিয়ে আসা হয়। যদিও প্রথম থেকেই এই বিষয়ে আপত্তি জানায় বামপন্থী সহ দেশের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। বিজেপি তথা আরএসএস অনুসারী দক্ষিণপন্থী শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সংঘ (BMS) প্রাথমিকভাবে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আপত্তি জানালেও পরে তা মেনে নেয়।
নতুন শ্রমকোড অনুসারে কারখানায় শ্রমিকদের কাজের সময় বৃদ্ধি, মহিলাদের রাত্রিকালীন শিফট-এ সম্মতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কোনও কারখানায় ৩০০ শ্রমিক থাকলেই সেখানে স্ট্যান্ডিং অর্ডার কার্যকর হবে। যার অর্থ যেসব সংস্থায় ৩০০-র কম কর্মী থাকবে সেখানে কোনও কর্মীকে কাজ থেকে বরখাস্ত বা নোটিশ ধরাতে হবেনা। আগে এই সংখ্যা ছিল ১০০। নতুন এই বিধিতে মালিকপক্ষই সুবিধা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়াও নতুন শ্রম কোড অনুসারে কোনও প্রতিষ্ঠানে ৩০০-র কম কর্মী থাকলে তারা সরকারকে না জানিয়েই সংস্থা উঠিয়ে দিতে পারবে। অর্থাৎ কোনও কারখানা বন্ধ করার জন্য সরকারি বাধার মুখে পড়তে হবেনা মালিকপক্ষকে।
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের এই যৌথ মঞ্চে আছে সিআইটিইউ, এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি, এইচএমএস, এআইইউটিইউসি, টিইউসিসি, এআইসিসিটিইউ, এলপিএফ, ইউটিইউসি, এসইডব্লুএ।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন