
বুধবার ভোরে মৌনী অমাবস্যা উপলক্ষ্যে কুম্ভমেলায় ‘শাহী স্নান’ করতে গিয়ে অতিরিক্ত ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে একাধিক জনের মৃত্যু হয়। হতাহতের সঠিক সংখ্যা সরকারের তরফ থেকে প্রকাশ না করা হলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, কমপক্ষে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৬০ জনেরও বেশী মানুষ আহত হয়েছেন। নিখোঁজ বহু। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ঘটনার সময়কার ভয়াবহ দৃশ্যের বর্ণনা করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকতা তাদের জানান, ''এখনও পর্যন্ত সাতজনের বেশী মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহতের সংখ্যা বহু। ঘাটের কাছে, যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে লাগানো সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, নদীর তীরে বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং পাশেই কয়েকটি মৃতদেহ আছে। সাতের বেশী মৃত দেহ ছিল। আহতদের প্রয়াগরাজের সেন্ট্রাল হাসপাতাল এবং স্বরূপ রানি হাসপাতালের নিয়ে যাওয়া হয়েছে।''
দৈনিক ভাস্করের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বহু পুণ্যার্থীদের অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। বেশ কয়েকজনের রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। স্বরূপ রানি হাসপাতালে ১০ টিরও বেশী মৃত দেহ আনা হয়েছিল। যদিও পরে মৃতদেহগুলিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পদপিষ্টের ফলে বহু মানুষ তাঁদের পরিবারের থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছেন। এমনকি তাঁদের কাছে থাকা মোবাইল এবং গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রও হারিয়ে ফেলেছেন। এক মহিলা পুণ্যার্থী জানিয়েছেন, "আমরা কাসপুরা থেকে এসেছি। আমাদের সাথে থাকা তিন শিশু নিখোঁজ। তাদের কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই বিপত্তিতে আমার মোবাইল এবং আধার কার্ডও হারিয়ে গেছে। এমনকি আমি আমাদের কোম্পানির কাউকে খুঁজে পাচ্ছি না”।
এই ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নালন্দার মীনা সাংবাদিকদের বলেন, “আমারা তখনও স্নান করিনি। হঠাৎ ধাক্কাধাক্কি, মারামারি শুরু হয়। আমারা তিনজন ছিলাম। আমার ননদ আহত। বর্তমানে সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই পদপিষ্টের অবস্থায় কোনরকমে প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছি”।
সাফাই কর্মী রমেশের অভিযোগ, পন্টুন ব্রিজগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি। তিনি বলেন, “কিছু সেতু ব্যবহার করা হয়নি, যার ফলে অন্যগুলোর উপর ভিড় বাড়ছিল”।
বিদ্যা সাহু নামে আর এক পুন্যার্থী বলেন, ভিড়ের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তিনি বলেন, “আমরা কর্ণাটকের বেলাগাভি থেকে এসেছি। আমরা হাঁটছিলাম, সেই মুহুর্তে পেছন থেকে লোকজন আমাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিয়ে গেল। বিপরীত দিকে একটি খুঁটি ছিল, এবং সবাই সেখানে আটকে পড়ি”।
এই ঘটনায় পায়ে গুরুতর চোট পাওয়া ফতেহপুরের বাসিন্দা রাম সিংহ সংবাদ মাধ্যমে জানান, "ভিড়ের মধ্যে পড়ে গিয়ে পায়ে খুব চোট পাই। সাহায্যের জন্য চিৎকার করেও লাভ হয়নি। কেউ এগিয়ে আসেননি। কোনও ক্রমে আহত অবস্থায় ভিড়ের সঙ্গে তাল রেখে বাইরে যাওয়ার গেটের কাছে পৌঁছাই। তার পর এক পুলিশকর্মী অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পাঠান।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন